বালুরঘাট: রক্তদান ও থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে সতর্কীকরণের বার্তা চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় যাত্রা শুরু করল পথের দিশা ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ব্লাড ডোনার্স অর্গানাইজেশনের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার পাঁচটি বাইক নিয়ে বালুরঘাট থেকে এই যাত্রা শুরু হয়েছে। যা আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত চলবে। রক্ত আন্দোলনের ১০ যোদ্ধা দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিঙ, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার জেলায় প্রচার অভিযান চালাবেন।
এই প্রচার যাত্রায় অংশ নিয়েছেন বালুরঘাটের মালঞ্চা এলাকার মান্না সরকার ও হিলির শুভজিৎ সাহা প্রমুখ। বাইক চালিয়ে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ঘুরে এসে তারা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে রক্তদান ও থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে দাবি দাওয়া সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দেবেন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার দুটি ব্লাড ব্যাংক বালুরঘাট ও গঙ্গারামপুরে মানুষের সুবিধার্থে দ্রুত কর্মী নিয়োগ করতে হবে। রক্তদান শিবির আয়োজকদের সুবিধার্থে যে মোবাইল ভ্যান মালদা জেলায় আছে। তা মাসে অন্তত ১০ দিনের জন্য আমাদের জেলায় আনার দাবি তারা রাখবেন। থ্যালাসেমিয়া রোগের উৎপত্তি আর সাবধানতা নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে শিশুদের পড়াতে হবে। বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া টেস্ট বাধ্যতামূলক করার দাবিও তারা তুলে ধরবেন।
পথের দিশার কর্ণধার সৌরভ রায় বলেন, ‘দীর্ঘ পাঁচ বছর রক্তদান নিয়ে কাজ করে আমাদের অভিজ্ঞতা এক সপ্তাহে আমাদের জেলায় প্রায় ১২০-১৫০ ইউনিট রক্ত থ্যালাসেমিয়া রোগীদের দিতে হয়। মাসে প্রায় ৪৫০-৫৫০ ইউনিট থ্যালাসেমিয়া রোগীদের দরকার। এখনও মানুষের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করাতে অনীহা রয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করতে তাদের আগ্রহ দেখা যায় না। ফলে সদ্যোজাত শিশুকে সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা এসব নিয়ে উত্তরবঙ্গবাসীকে সজাগ করতে চাই।’
যাত্রী মান্না সরকার জানান, ‘রক্তদানে এখনও পুরোপুরি ভয় কাটানো যায়নি। রক্তদান করলে শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। বরং উপকার হয়। এই বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যাত্রা শেষে আমরা প্রশাসনের কাছে নির্দিষ্ট দাবি রাখব।’
শুভজিৎ সাহার কথায়, ‘এই যাত্রায় রক্তদান ও থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার করা হবে। পাঁচটি জেলার প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আশা করছি বিভিন্ন জেলার প্রচুর মানুষের সঙ্গে আত্মিক সংযোগ স্থাপন করতে পারব।’
মূলত বাবা মা দু’জনে থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে বাচ্চার থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সব থেকে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু আমাদের দেশে প্রায় ১.৫ লক্ষ ও ভারতে প্রতি বছর ১৫ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। গোটা বিশ্বে প্রায় ২৭ কোটি মানুষ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। সাধারণ মানুষকে রক্তের এই অসুখ সম্পর্কে শিক্ষিত করে তুলতে পারলেই থ্যালাসেমিয়ার প্রতিরোধ সম্ভব। পাশাপাশি, রোগীর জীবন বাঁচাতে রক্তদানের কোনও বিকল্প নেই। এমন বার্তা ছড়িয়ে দিতেই তাদের এই যাত্রা।