মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, বীরপাড়া: দীর্ঘদিন ধরে রাতেরবেলা বেআইনিভাবে বালি পাচার (Sand Smuggling) করা হচ্ছে মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের বিভিন্ন নদী থেকে। এতে লোকসান হচ্ছে লিজহোল্ডারদের। প্রাপ্য কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকারও। অভিযোগ পেয়ে বালি পাচার রুখতে নজরদারি বাড়িয়েছে বীরপাড়া (Birpara) থানার পুলিশও। শুক্রবার রাতে ডিমডিমা-নাংডালা রোড থেকে বালিবোঝাই তিনটি ডাম্পার আটক করে পুলিশ। ডাম্পার তিনটি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি তিনজন চালককেও গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হল ফালাকাটা ব্লকের ছোট শালকুমারের অমল বর্মন, উৎসব বর্মন এবং সাতপুকুরিয়ার কার্তিক বর্মন। শনিবার ধৃতদের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেয় আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) মহকুমা আদালত।
মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লক বরাবরই বালি পাচারকারীদের কাছে ‘সোনার খনি’। ওই ব্লকে প্রচুর নদী এবং ঝোরা রয়েছে। এগুলির মধ্যে বীরপাড়া থানা এলাকারই তিনটি নদীর মোট পাঁচটি জায়গা থেকে বালি তোলার অনুমতি রয়েছে। এজন্য সিএফটি সিস্টেমে রয়্যালটি কিনতে হয়। বর্তমানে বীরপাড়ায় ১ সিএফটির রয়্যালটি ১৬ টাকা। অর্থাৎ, ২০০ সিএফটির একটি ট্রাকে বালি বোঝাই করতে রয়্যালটি বাবদ দিতে হয় ৩ হাজার ২০০ টাকা। তবে রয়্যালটি ফাঁকি দিয়ে বেআইনিভাবে বালি কিনলেও ক্রেতার সাশ্রয় হয়। রয়্যালটি না দিলে পুরো টাকাটাই অসাধু ব্যবসায়ী অর্থাৎ পাচারকারীর অবৈধ লাভের খাতায় জমা হয়।
স্বাভাবিকভাবেই, রাতেরবেলা বালি পাচারে ঝুঁকেছে অনেকেই। তবে রয়্যালটি প্রদাতা বৈধ ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, বালি পাচার রুখতে পুলিশ মাঝে মাঝে পদক্ষেপ করলেও জালে পড়ে কেবলমাত্র গাড়িচালকদের মতো ‘চুনোপুঁটি’রাই। পাচারচক্রের মূল পান্ডারা বরাবরই পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। শুক্রবার রাতেও গাড়িচালকরাই ধরা পড়েছে। এক্ষেত্রে আটক গাড়িগুলিই পাচারকারীদের ধরতে ব্যবহার করা যেতে পারে, বক্তব্য তাঁদের। শুক্রবার রাতে বাজেয়াপ্ত করা ডাম্পার তিনটির মালিকের নাম অবশ্য শনিবার পর্যন্ত জানা যায়নি। বীরপাড়া থানার ওসি নয়ন দাস বলেন, ‘তদন্ত শুরু হয়েছে।’
এদিকে বালি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এলাকায় সিএফটি প্রতি মাত্রাতিরিক্ত রয়্যালটি রেটই অবৈধভাবে বালি পাচারে প্ররোচনা দিচ্ছে। তাঁরা জানান, জলপাইগুড়ি জেলার ডায়না নদী থেকে বালি তোলার সিএফটি প্রতি রয়্যালটি রেট ৯/১০ টাকা। অথচ বীরপাড়ায় ১৬ টাকা। অবশ্য বীরপাড়া এলাকার রিভার বেড লিজহোল্ডার সোহেল রহমানের বক্তব্য, ‘রয়্যালটির ওপর আয়কর, জিএসটি, সেস সহ বিভিন্ন ধরনের কর ধার্য রয়েছে। সব মিলিয়ে সিএফটি প্রতি রেট দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা। এটি হল মাইনিং রেট। তবে ডায়না নদীর রয়্যালটি রেটটি মাইনিং রেট নয়। সেটি হল ড্রেজিং রেট। অর্থাৎ ডায়না নদীর বক্ষ খনন নয়, চেঁছে তোলা হয় বালি। দিন-দিন ডায়না নদীর বক্ষ বালিতে ভরে যাচ্ছে। নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে। ডায়নার ক্ষেত্রে তাই ড্রেজিং পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই, ডায়নার রেট কম।’