সানি সরকার, শিলিগুড়ি: প্রভাতি বার্তায় হিন্দু নববর্ষের শুভেচ্ছা পেয়ে রীতিমতো হতচকিত হয়ে পড়েছিলেন দেশবন্ধুপাড়ার প্রীতম সরকার। বাংলা নববর্ষ শুরু হতে আরও কয়েকদিন বাকি। তাহলে এখনই কেন নতুন বছরের শুভেচ্ছা? হিন্দুই বা কেন? তাঁর মাথায় সাতসকালেই নানা প্রশ্ন জড়ো হতে থাকল। নেট ঘেঁটে কিছু তথ্য পেলেন বটে, কিন্তু ‘হিন্দু নববর্ষ’ নিয়ে হঠাৎ কেন শুভেচ্ছাবার্তা, বোধগম্য হল না তাঁর। শুধু তিনি কেন, মঙ্গলবার তাঁর মতো অনেকেই এমন শুভেচ্ছোবার্তা পেয়েছেন এবং হতচকিত হয়ে পড়েছেন।
চৈত্র শুক্ল হওয়ায় মঙ্গলবার যে বর্ষ প্রতিপদ, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। অর্থাৎ বিক্রম সংবৎ ২০৮১। কিন্তু হিন্দু নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর ক্ষেত্রটা বিজেপি (BJP) নেতৃত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় এবং এবছরই এমন শুভেচ্ছাবার্তা প্রথম প্রকাশ্যে আসায় তা নিয়েই চর্চা চলছে। এই চর্চা আরও প্রাসঙ্গিক হয়েছে লোকসভা নির্বাচন (Lok sabha election 2024) সামনে থাকায়। রামনবমীর পাশাপাশি হিন্দুত্বের জিগির তুলতে যে হিন্দু নববর্ষকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই কোনও সংশয় নেই। যদিও বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, ইতিহাসকে মাটিচাপা দিয়ে রাখা কখনোই সনাতনধর্মীদের কর্তব্য হতে পারে না। বরং ইতিহাসকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা উচিত। এমন কথাই শোনা গেল মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মনের মুখে। তিনি বললেন, ‘কয়েক বছর ধরেই আমরা এই চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি, হিন্দু ধর্মের সমস্ত দিক উন্মোচিত হোক। সমস্ত কিছু পুনরুদ্ধার কর্তব্য বলে মনে করছি।’
একসময় পোড়খাওয়া সিপিএম (CPM) নেতা ছিলেন শংকর ঘোষ (Shankar Ghosh)। এখন তিনি বিজেপি শিবিরে। শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকরের মতে, ‘প্রতিটি ক্যালেন্ডারের নিজস্ব ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসকে স্মরণে রাখা এবং সংরক্ষণ করা উচিত, নিজেদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য।’ ইংরেজি ক্যালেন্ডারের থেকে যে পুরোনো বিক্রম সংবৎ, মনে করিয়ে দিচ্ছেন শংকর। তাঁরা যে যুক্তিই দেন না কেন, ভোটবাজারে যে হিন্দু নববর্ষ বিজেপির প্রচারের নতুন কৌশল, তা গেরুয়া শিবিরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। তবে বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরুণ মণ্ডল বলছেন, ‘নিন্দুকেরা অনেক কিছুই বলতে পারেন। তবে আমরা হিন্দু ধর্মকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সমস্ত কিছুই করব। সনাতন ইতিহাসকে রক্ষা করা আমাদের ব্রত।’
দিনটির তাৎপর্য বোঝাতে এদিন ভগবান রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক, ভগবান বিষ্ণুর প্রথম অবতার, সম্রাট বিক্রমাদিত্যের রাজ্য স্থাপনার মতো কিছু ঘটনা তুলে ধরা হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের তরফে। কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে তাঁর গ্রুপে এদিন সাতসকালেই এমন শুভেচ্ছাবার্তা পোস্ট করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘সনাতন ইতিহাসকে রক্ষা করা করা সমস্ত ভারতীয়র উচিত।’ শুধু হিন্দু নববর্ষ নয়, ভারতীয় নববর্ষ নামেও কিছু শুভেচ্ছাবার্তা ছড়িয়েছে।
এই দিনেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ কেশব বলিরাম হেডগাওয়ার জন্মেছিলেন। তাই দিনটি এতদিন পালন করে আসছিল আরএসএস। কিন্তু ভোটবাজারে হিন্দু নববর্ষকে সর্বজনীন করতে চাইছে বিজেপি।