সানি সরকার, শিলিগুড়ি: মুরগি যদি কথা বলতে পারত, নিশ্চয়ই বলত ‘আমার কি দোষ বলো?’ কেননা, বাংলার ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণের পর এবার যে খাদ্যেও যে বিভাজন ঘটেছে। ‘ডিম-ভাত’ নাকি তৃণমূলের খাবার! আর তাই বিজেপি শিবিরে এখন ‘অচ্ছুত’ এই খাবার। ডিম-ভাত ‘বয়কটে’ অবশ্য বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে পদ্মের জেলা নেতৃত্বকে। ভাতের সঙ্গে মাছের জোগান দিতে গিয়ে বাজেটের অঙ্কে হেরফের ঘটাতে হচ্ছে তাঁদের।
নিরামিষ থেকে আমিষে কিছুদিন আগেই উত্তরণ ঘটেছে বিজেপির। কিন্তু তাতেও বিড়ম্বনার শেষ নেই। এবার সমস্যা দেখা দিয়েছে ডিম-ভাত নিয়ে। গত বুধবার মাটিগাড়ায় কর্মীসভা ছিল। তাতে যোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই কর্মীদের কানে পৌঁছে যায়, দুপুরের মেনুতে রয়েছে ডিম-ভাত। যা জানার পর তাঁরা নাকি রে রে করে ওঠেন। ‘তৃণমূলের খাবার কেন খাব?’, এমন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় ব্লক নেতৃত্বকে। কর্মীদের মন রাখতে শেষ পর্যন্ত ডিমের পরিবর্তে মাছের ব্যবস্থা করা হয়। সঙ্গে ফুলকপির তরকারি। শিবমন্দির-আঠারোখাইয়ের বিজেপি নেতা সুভাষ ঘোষ বলছেন, ‘ডিম-ভাতের পরিবর্তে মাছ-ভাত করা হয়েছিল। সঙ্গে সবজিও ছিল। এতে কোনও সমস্যা হয়নি।’
ডিম-ভাতকে ‘অচ্ছুত’ করে দেওয়া নিয়ে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দময় বর্মন বলছেন, ‘কর্মীসভায় থাকলেও যেহেতু আমি খাইনি, তাই মেনু কী ছিল জানা নেই। তবে ডিম না খাওয়ার কী আছে! আমরা কি বাড়িতে ডিম খাই না?’
শুধু মাটিগাড়া নয়, বিষয়টি সংক্রমণের মতো ছড়িয়েছে বাকি তিন ব্লকেও। প্রতিটি জায়গাতেই ডিম-ভাত বয়কটের ডাক উঠেছে। যেমন গত শুক্রবার বাগডোগরায় কর্মীসভা ছিল। সেখানকার কর্মীরাও মাছ-ভাত ছাড়া মুখে তুলবে না আগেভাগে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কেন? নকশালবাড়ির এক বিজেপি কর্মী বললেন, ‘ডিম-ভাত তো তৃণমূল খায়। ২১ জুলাইয়ে খাওয়ানো হয়। ওদের খাবার আমরা খাব কেন?’ বাড়িতে কি ডিম খান না, প্রশ্নের কোনও জবাব অবশ্য পাওয়া যায়নি তাঁর কাছ থেকে।
কর্মীদের ডিম বয়কটের কথা স্বীকার করে নিয়ে বিজেপির শিলিগুড়ির সাংগঠনিক জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজু সাহা বলছেন, ‘কর্মীরা ডিম খেতে না চাওয়ায় মাছের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এতে কিছুটা খরচও বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু বিষয়টিকে আমরা সাধারণ চোখেই দেখছি।’
২৬ এপ্রিল রয়েছে দার্জিলিং কেন্দ্রে ভোট। ভোটের দিন রীতিমতো সমস্ত কর্মীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। ভোটের আগেও একাধিক প্রস্তুতি বৈঠক রয়েছে। এই ক্ষেত্রেও কি ডিম বয়কট? হাসছেন রাজু। বললেন, ‘দেখা যাক কী হয়! ভোট তো আমাদের উৎসব।’
একসময় বিজেপির যে কোনও কর্মসূচিতে প্রাধান্য পেত নিরামিষ। কিন্তু আনন্দময় বর্মন জেলা সভাপতি হওয়ার পর মূলত প্রথার পরিবর্তন ঘটে। আর তাতেই এখন ‘সর্বনেশে’ দশা।