উত্তরবঙ্গ ব্যুরো: ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে চারিদিকে ছাপ্পা, রিগিং হয়েছে। সেইসঙ্গে ব্যালট চুরি সহ বিভিন্ন ব্লকের বিডিওদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তৃণমূল কংগ্রেসকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে ঠিক এমনই অভিযোগ রাজ্য বিজেপির। তাই রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে ‘বিডিও ঘেরাও, গণতন্ত্র ফেরাও’-এর ডাক দেওয়া হয়। রাজ্য বিজেপির সেই নির্দেশ মতো শুক্রবার ২১ জুলাই কলকাতায় যখন তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ সমাবেশ চলছে তখন রাজ্যের বিভিন্ন বিডিও অফিস ঘেরাও কর্মসূচি চলছে বিজেপির। এই কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিল উত্তরবঙ্গের বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। এদিন কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমাতেও সক্রিয় ছিল বিজেপি। দিনহাটা মহকুমার সিতাই, দিনহাটা ১ ব্লকেও ১৪৪ ধারা জারি থাকায় বিডিও অফিস চত্বরে প্রচুর পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকতে দেখা যায়। বিজেপির সিতাই বিধানসভার আহ্বায়ক দীপক রায়ের নেতৃত্বে দলীয় কর্মী, সমর্থকেরা মিছিল করে সিতাই ও দিনহাটা ১-এর বিডিও অফিস চত্বরে আসা মাত্রই পুলিশ তাদের পথ আটকে দেয়। বিডিওকে ডেপুটেশন দিতে চাওয়া হলেও পুলিশের বাধার মুখে পড়ে শেষমেষ বিক্ষোভ দেখিয়ে বিজেপির নেতা, কর্মীরা ফিরে যেতে বাধ্য হন।
অন্যদিকে, মেটেলি বিডিও অফিসে বিজেপির ডেপুটেশন ঘিরে উত্তেজনা, পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভাঙল বিজেপি কর্মীরা। পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিজেপি নেতা কর্মীদের। মেটেলি বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, দলদাসে পরিণত হয়েছে বিডিও, পুলিশ সহ প্রশাসনের একটা অংশ। যেকারণেই শাসকদল ভোট লুট করতে পেরেছে। যদি তা না হত তাহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির ফল ভালো হত বলে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি। ৬ জন প্রতিনিধি বিডিওর কাছে গিয়ে ডেপুটেশন প্রদান করেন।
বালুরঘাট বিডিও অফিস ঘেরাও বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে শুক্রবার উত্তেজনা ছড়াল বালুরঘাট বিডিও অফিস চত্বরে। বিজেপি কর্মী সমর্থকরা যাতে কোনভাবেই বিডিও অফিসে যেতে না পারে তার জন্য বিডিও অফিসের আগেই পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে। সেই ব্যারিকেড ভেঙে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে বিজেপি নেতৃত্ব।
বিডিও অফিসে ডেপুটেশন দিতে এসে পুলিশের বাধার মুখে হলদিবাড়ির বিজেপি নেতা কর্মীরা। এদিন হলদিবাড়ি রেলগেট সংলগ্ন দলীয় কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বের করা হয় মিছিলটি হলদিবাড়ি অফিস সংলগ্ন এলাকায় এলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে তাঁরা।
মেখলিগঞ্জের বিডিওকে ডেপুটেশন দেওয়ার জন্য মিছিল বের করেছিল বিজেপি। সেই মিছিল মেখলিগঞ্জ থানার পুলিশ আটক করল চ্যাংরাবান্ধায়।
পাশাপাশি, আজ বিজেপি কর্মীরা রায়গঞ্জ বিডিও অফিসে ডেপুটেশন দিতে গেলে পুলিশ গেটের বাইরে তাঁদের আটকে দেয়। বিডিও অফিস চত্বরের বাইরে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি পুলিশের হাতে জমা দিয়ে তাঁরা ফিরে যান। অন্যদিকে, হেমতাবাদে অবশ্য বিজেপি কর্মীরা মিছিল করে বিডিও অফিস চত্বরে যান। এরপর এক প্রতিনিধি দল বিডিও-কে ডেপুটেশন দেন। এছাড়া ইটাহার ও করণদিঘি ব্লকেও এদিন বিজেপি কর্মীরা মিছিল করেন। তবে খুব কম সংখ্যক কর্মী নিয়ে এদিন কর্মসূচি সারেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিডিও অফিসে ঢোকার আগেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। বিডিও ঘেরাও, গণতন্ত্র ফেরাও-এর স্লোগান তুলে কালিয়াগঞ্জ বিডিও অফিস ঘেরাও অভিযান কর্মসূচি পালন করল বিজেপি।
বিজেপির বিডিও অফিস ঘেরাও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল মাটিগাড়া বিডিও অফিস চত্বরে। এদিন বিজেপি কর্মীরা ব্যারিকেড ভেঙে বিডিও অফিসে ঢুকতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে।
বিডিও অফিসে অভিযান কর্মসূচি চালাল বিজেপির নাগরাকাটার এক নম্বর মণ্ডল কমিটি। ওই কর্মসূচিকে ঘিরে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল যথেষ্ট আঁটোসাটো। কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়। মিছিল করে এসে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা বিডিও অফিসে ঢোকার চেষ্টা করলেও পুলিশের ব্যারিকেডে বাধা পেয়ে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে পড়ে। দলের এক দল প্রতিনিধি পরে বিডিও-র সঙ্গে গিয়ে দেখা করে তাঁদের অভিযোগ সবিস্তারে জানান।
গোটা রাজ্যের পাশাপাশি রাজগঞ্জে বিডিও অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করল বিজেপির নেতা কর্মীরা। ১৪৪ ধারাকে উপেক্ষা করে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙে বিক্ষোভ মিছিলে শামিল হয় বিজেপি ব্লক নেতৃত্ব সহ কর্মী সমর্থক। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত থেকে বিধায়ক শংকর ঘোষ প্রশাসনের একাংশের আমলাদের হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, ‘কিছু আধিকারিকরা দলীয় নির্দেশে অনৈতিক কাজ করছেন। বিজেপি সরকারে এলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘