পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: হিমালয়ান কালো ভালুকের (Black bear) সংখ্যা কত? তার আচরণ, স্বভাব ও খাদ্যাভ্যাস কি বদলাচ্ছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হল রাজ্য বন দপ্তর (Forest department)। ডিএনএ ও জেনেটিক গবেষণার মাধ্যমে এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে। এজন্য ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (wildlife institute of india) এবং সেন্টার ফর মলিকিউলার বায়োলজি (centre for molecular biology) নামে দুই বিশেষজ্ঞ সংস্থার কাছে প্রায় শতাধিক নমুনা পাঠিয়েছে গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগ। গত বছরের ডিসেম্বরে নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যানে ভালুকের উপর একটি বিভাগীয় সমীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ চালানো হয়েছিল। ট্রাপ ক্যামেরায় বেশকিছু ছবিও মিলেছিল। সেগুলি সূক্ষ্মভাবে খতিয়ে দেখা, জঙ্গলে ভালুকের খাদ্য ভাণ্ডারে টান পড়েছে কিনা তা সহ আরও কিছু বাড়তি তথ্য খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেজন্যই বিশেষজ্ঞদের উপর ভরসা করছে গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগ।
কেন হিমালয়ান কালো ভালুক বারবার পাহাড়ি এলাকা থেকে সমতলে নেমে আসছে? ২০২১ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ভালুকের ডুয়ার্সে নেমে আসায় বন দপ্তরের উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা বেড়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, ভালুক একা থাকতে পছন্দ করে। পাহাড় ছেড়ে সমতলে আসা কি তাদের আচরণ বদলের ইঙ্গিত? এসব জানতেই নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যানের ভিতর ট্র্যাপ ক্যামেরায় নজরদারি বাড়িয়েছে বন দপ্তর। গত ডিসেম্বরে ভালুকের উপর করা সমীক্ষার সময় পাওয়া মল, গাছে নখের আঁচড়, আবাসস্থলের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান সেন্টার ফর মলিকিউলার বায়োলজির বিশেষজ্ঞরা। এই নমুনার পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেছেন তাঁরা। এ থেকে তাঁরা ভালুকের ডিএনএ সহ জেনেটিক পরিবর্তন আসছে কি না তা জানার চেষ্টা করছেন।
গত বছর সমীক্ষার বাইরে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নেওড়া ভ্যালিতে বসানো ট্রাপ ক্যামেরায় এলাকাভিত্তিক হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের ছবি উঠেছে। রয়েল বেঙ্গলের গায়ের ডোরাকাটা দাগের রকমফের মিলিয়ে বাঘের সংখ্যার হেরফের বোঝা গেলেও একই রকম দেখতে ভালুকের সংখ্যা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাচ্ছে না বলে গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেন জানান।
ডুয়ার্সের (Dooars) সমতলে হিমালয়ান কালো ভালুক নেমে আসার কথা ভাবতেই পারেননি ডুয়ার্সবাসী। কিন্তু ২০২১ সালে শীতের সকালে মেটেলি চা বাগানে ভালুক নেমে এসেছিল। উত্তেজিত জনতা ভালুকটিকে পিটিয়ে মারে। যদিও তার আগে ভালুকটি এক যুবককে আক্রমণ করে মেরে ফেলেছিল। ওই বছর থেকে ২০২৩ অবধি জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের বহু চা বাগান সহ মালবাজার শহরে অবধি ভালুক চলে এসেছিল। তাদের গতিবিধি, বাসস্থান এসব জানতে রেডিওকলার পরানোরও উদ্যোগ নিয়েছিল বন দপ্তর। সেজন্য বন দপ্তর একটি উদ্ধার হওয়া ভালুককে পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখেছিল। কিন্তু ওই রেডিওকলারটি ভালুকের গলায় মাপমতো না হওয়ায় সেটি ছাড়াই ভালুকটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। হিমালয়ের কালো ভালুকের আচরণ, বাসস্থান, খাদ্যাভ্যাসে বদল ঘটছে কিনা এবং সেইমতো ব্যবস্থা নিতে ওই বিশেষজ্ঞ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা তৈরির চিন্তাভাবনা রয়েছে বন দপ্তরের।