সানি সরকার, শিলিগুড়ি: এবার কি শৈত্যপ্রবাহ ঘটবে? প্রশ্নটা করতেই ফোনের ওই প্রান্ত থেকে উত্তর এল, ‘কী যে বলছেন! টানা কয়েকদিন ধরে রোদের যা তাপ, তাতে বুঝতে পারছি না পাহাড়ে রয়েছি কি না!’ পেশায় হোটেল ম্যানেজার স্বপন বিশ্বাসকে বোঝানো গেল না, সমতলে কয়েকদিন ধরে কার্যত সূর্যের দেখা মিলছে না। বিষয়টা তিনি হেসে উড়িয়েই দিলেন। তবে পাহাড়-সমতলের মধ্যে যাঁরা প্রত্যেকদিন গাড়ি নিয়ে ওঠানামা করেন, তাঁরা বুঝতে পারছেন দার্জিলিং এবং শিলিগুড়ির মধ্যে আবহাওয়ার পার্থক্যটা কোথায়। তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য, এদিন কোচবিহার ও কালিম্পংয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা একই বিন্দুতে।
পাহাড়ে সোনা রোদ থাকলেও ঘন কুয়াশার মধ্যে উত্তুরে হাওয়ার দাপট ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকায় শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা দানা বাঁধছে সমতলে। ‘আর পারা যাচ্ছে না’, বলছেন আমজনতা। কিন্তু ফেলে আসা বছরটাকে এখনও পর্যন্ত টেক্কা দিতে পারা গেল কোথায়? আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ধারেকাছে পৌঁছাতে পারেনি চলতি বছর। গত বছর ১৬ জানুয়ারি ছিল শিলিগুড়ি (১৫.৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড), জলপাইগুড়ি (১৫.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) ও কোচবিহারের (১৪.৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) শীতলতম দিন। অর্থাৎ সর্বনিম্ন তাপমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ’২৩-এর ৫ জানুয়ারি বালুরঘাটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭.৫ এবং ৬ জানুয়ারি মালদার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দাঁড়িয়ে ছিল ১৬.২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে। প্রায় এক বছরের মাথায় বৃহস্পতিবার সমতলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সেখানে কিছুটা হলেও বেশি। তবে অনুভূতির সঙ্গে মেলানো যাচ্ছে না তথ্য। আবহবিদদের বক্তব্য, এদিন শিলিগুড়ির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৮.০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হলেও অনূভূত হয়েছে ১৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেরও নীচে।
অবশ্য আগামী সপ্তাহেই উত্তরবঙ্গ আরও শীতলতম হয়ে উঠতে পারে। ’২৩-এর রেকর্ড অনায়াসে ভেঙে দিতে পারে ২০২৪। কেননা, দুয়ারে থাকা পশ্চিমী ঝঞ্ঝা এতটাই শক্তি বাড়িয়েছে যে, বুধবার থেকে হুহু করে পারদ পতনে কাঁপনটা আরও বাড়বে। আবহাওয়ার মতিগতি দেখে আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহার পূর্বাভাস, ‘১৭ জানুয়ারি থেকে অনেকটাই বদলে যাবে আবহাওয়া। পাহাড়ের পাশাপাশি সমতলের বেশ কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে। পাহাড়ের কয়েকটি এলাকায় তুষারপাত ঘটতে পারে। স্বাভাবিকভাবে এমন পরিস্থিতিতে আরও শীতল হবে উত্তরবঙ্গ।’
এমন পূর্বাভাস যেন আরও কাঁপন ধরিয়ে দিল উত্তরের। গত কয়েকদিনের ঠান্ডায় একেই ঘরের বাইরে পা রাখা যাচ্ছে না, সকাল-রাতে কার্যত বিপর্যস্ত জনজীবন। তার মধ্যে যদি পারদ পৌঁছায় তলানিতে, তবে তো থাকতে হবে লেপমুড়িতেই। পরিস্থিতিটা শৈত্যপ্রবাহের।