দেওয়ানহাটঃ বৈশাখের পর জ্যৈষ্ঠ মাসে কোচবিহার জেলাজুড়ে ব্যাপক তাপপ্রবাহ চলছে। প্রখর রোদ ও প্রচণ্ড গরমে জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া এই অবস্থায় অনেকে যথারীতি ঘরবন্দি থাকছেন। তবে, গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের সে উপায় নেই। এই আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা জমি থেকে বোরো ধান, ভুট্টা ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত। সবাই যখন টানা বৃষ্টির প্রার্থনা করছেন, তখন বোরো ও ভুট্টাচষিরা আর কয়েকটা দিন এই আবহাওয়া চাইছেন। কোচবিহার-১ ব্লকের হাঁড়িভাঙ্গা অঞ্চলের বোরোচাষি সুদাম বর্মন বলেন, ‘চড়া রোদে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এখন এক মুহূর্ত বসার ফুরসত নেই। অনেক টাকা খরচ করে চাষ করেছি। বৃষ্টি শুরু হলে ধান ঘরে তুলতে সমস্যায় পড়ব।’ একই বক্তব্য পাটছড়ার বোরোচাষি সুনীল বর্মন, চিলকিরহাটের আনরুল মিয়াঁর।
কোচবিহার জেলায় এবার বিশাল এলাকাজুড়ে বোরো চাষ হয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে উৎপাদিত ধানের সিংহভাগ জমি থেকে তোলার কাজ শেষ। চলতি আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে বাকি ধান ঘরে তোলার কাজে চাষিরা এখন ব্যস্ত। ধান মাড়াইয়ের পর চড়া রোদ থাকলে তা শুকোনো অত্যন্ত সহজ হয়ে যায়। খড় শুকোতেও চড়া আবহাওয়ার প্রয়োজন। বোরো ধানের মতো কোচবিহার জেলায় ভুট্টা চাষের এলাকাও ক্রমশ বাড়ছে। রবি ও খারিফ শস্য মিলিয়ে জেলায় কমবেশি প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়। জমি থেকে তোলার পর ভুট্টা শুকোনোর ক্ষেত্রে রোদযুক্ত আবহাওয়া অত্যন্ত কার্যকরী। এতে উৎপাদিত শস্য ঘরে তুলতে সময় ও খরচ অনেকটা কমে গিয়ে আর্থিক লাভের পরিমাণ বাড়ে। কোচবিহার-১ ব্লকের জিরানপুর এলাকার ভুট্টাচাষি রফিক শেখের এখন শরীরের দিকে তাকাবার সুযোগ নেই। তাঁর কথায়, ‘শরীর থাক আর যাক, এসময় যে কোনও মূল্যে ফসল ঘরে তুলতে হবে। তাতে সারাবছর অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকব।’ গ্রামাঞ্চলে এই ব্যস্ততায় চাষিদের সঙ্গে সমানভাবে হাত লাগিয়েছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও।
তবে ভুট্টা ও বোরোচাষিদের সুবিধা হলেও এই আবহাওয়ায় সমস্যা রয়েছে। অতিরিক্ত তাপপ্রবাহে পাট চাষ ক্ষতির মুখে। এছাড়া পটল, ঝিঙে, কাঁকরোল, শসা, করলা ইত্যাদি সবজির গাছ ঝিমিয়ে যাচ্ছে। ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা কমেছে বলে খবর। তবে চাষে ক্ষতি এড়াতে কোচবিহার জেলা কৃষি দপ্তর নিয়মিত জলসেচের পরামর্শ দিয়েছে।