জলপাইগুড়িঃ ঘড়িতে তখন ৭টা বেজে ৩০ মিনিট। হোটেলটির হলঘরে রয়েছেন প্রায় ৩৫ জন। কাচের দরজা ঠেলে ঢুকলেন রূপান্তরকামী চাঁদনি রায়। সবার চোখ তখন সেইদিকে। একে একে ঢুকলেন সুইটি, প্রিয়া, শালিনী, বনি, জিয়ারা। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হলঘর হাততালিতে ফেটে পড়ে। সবার গলায় প্রশংসার সুর। চাঁদনিদের মুখে তখন জয়ের হাসি।
তাঁদের বরাবরই একটু অন্য নজরে দেখা হয়। কিন্তু তাঁরাও আর পাঁচটা রক্তমাংসের মানুষের মতোই সাধারণ। তবে একইসঙ্গে তাঁরা অসাধারণ কিছুও করে দেখাতে পারেন, শনিবার জলপাইগুড়ির একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ফ্যাশন শোয়ে সেটাই দেখিয়ে দিলেন। তাঁরা রূপান্তরকামী।
কিন্তু এই ৬ রূপান্তরকামীই বুঝিয়ে দিলেন, তাঁরাও পারেন। লড়াইটা সহজ না হলেও গন্তব্যে পৌঁছানোর আনন্দটাই আলাদা, বললেন চাঁদনি। তাঁর কথায়, ‘আমরা সকলে স্বাবলম্বী। আমি একটি বিমা সংস্থায় কাজ করি। তারপরেও আমাদের কটূক্তি শুনতে হয়। এই ফ্যাশন শোয়ের মধ্যে দিয়ে আমরা সমাজের মূলস্রোতে ফেরার চেষ্টায় নেমেছি।’ তাঁর মতে, লড়াইয়ে হারজিত তো থাকবেই। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম যেন তাদের দেখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পায়।
মিস্টার অ্যান্ড মিস জলপাইগুড়ি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন বনি রায় এবং তিত রায়। তাঁরাও রূপান্তরকামী। তিত মডেল, মেকআপ আর্টিস্ট এবং একইসঙ্গে পারিবারিক ব্যবসা দেখছেন। বনি অবশ্য আয়োজক হওয়ার পাশাপাশি এদিন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণও করেন। তিনিও একজন মডেল এবং মেকআপ আর্টিস্ট। অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
আরেক প্রতিযোগী সুইটি রায় রূপান্তরকামীদের নিয়ে একটি প্রোজেক্টে কাজ করছেন। তিনি বলন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সবাই র্যাম্পে হাঁটতে পারলে আমরা বাদ যাব কেন? তাই তো কোনও দ্বিধা না করে চলে এসেছি।’
প্রিয়া দাস খাদির দোকানে কাজ করেন এবং শালিনী দে টিউশন পড়িয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। কেউই পরনির্ভর না হলেও সমাজের চোখরাঙানি বরাবর সহ্য করতে হয়।
আয়োজক তিত বলেন, ‘আমাদের লড়াইটা আমাদেরই লড়তে হবে। শুধু সকলের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাউকে রাস্তায় দেখে কোনওভাবে কটূক্তি না করেন। আমরা যেমন ভালোবেসে কাছে টানতে জানি। ঠিক তেমনই বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়েও দিতে পারি।’ একই কথা শোনা গেল আরেক আয়োজক তথা প্রতিযোগী বনির মুখেও।
প্রতিযোগী বর্ণালি রায় সুইটি, জিয়াদের সঙ্গে হেঁটে খুশি। তাঁর কথায়, ‘সবার সঙ্গে কথা বলে, র্যাম্পে হেঁটে, আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যাটা বেশ ভালোই কেটেছে।’