সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি: রাজ্য সরকারের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প মহিলাদের ভোট শাসকদলের পক্ষে টানতে কতটা সফল হচ্ছে তা নিয়ে ভরা ভোটের বাজারে জল্পনার অন্ত নেই। ওদিকে রাজনীতির থেকে বহু দূরে রয়েছেন শ্যামল রায়। কিন্তু বৌ হারিয়ে দুষছেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে। হঠাৎই স্ত্রী উধাও হয়ে যাওয়ায় দুই শিশুসন্তান নিয়ে অথই জলে পড়া তরুণ স্ত্রীর খোঁজে হাপিত্যেশ করছেন অনবরত। সংসার, সন্তানদের স্বার্থেই স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে চাওয়া শ্যামল বলেন, ‘মোবাইল নিয়ে কিছু বললেই রেগে যেত। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে পাওয়া ওর টাকায় কেনা মোবাইলে ও যা খুশি করবে বলে দাপট দেখাত। সবই মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু এভাবে চলে যাবে ভাবিনি।’
অভাবকে সঙ্গী করেই এগারো বছরের দাম্পত্য পঁয়ত্রিশের শ্যামল এবং বছর ত্রিশের নিরুপমার। রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে যেটুকু আয় হয় তা দিয়েই চলে দুই সন্তান সহ স্বামী-স্ত্রী মিলে চারজনের সংসার। ধূপগুড়ি ব্লকের মাগুরমারি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর আলতাগ্রাম ভাঙ্গা অঞ্চল এলাকায় একচিলতে ছাপরা ঘরে জৌলুস না থাকলেও শান্তির অভাব ছিল না বলেই মত প্রতিবেশীদের। তবে সমস্যার শুরু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের হাজার টাকা মেলার পরেই। তরুণ জানান, স্ত্রী নিরুপমা কোনওদিনই সেই টাকা খরচ করতে দেননি পরিবারের জন্য। এভাবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা জমিয়েই কিনে ফেলেন স্মার্টফোন। তারপর থেকেই বদলে যায় জীবনের চালচিত্র। পরিবারের একমাত্র স্মার্টফোনের মালকিন হিসেবে দিনরাত সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়েই নাকি থাকতে দেখা যেত নিরুপমাকে। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ‘রিলস’ বানিয়ে পোস্ট করার প্রবণতাও শুরু হয়েছিল। মাঝেমধ্যে সেইসব শর্ট ভিডিও তথা রিলসে অভিনয় করতে স্বামী, সন্তান এমনকি প্রতিবেশীদেরও সাহায্য নিতেন নিরুপমা। এসব নিয়ে মাঝেমধ্যেই বচসা হত দম্পতির। হালে নিরুপমাকে টানা ফোনে কথা বলতেই দেখা যেত বলে জানান প্রতিবেশীরা।
সমস্যা চরমে ওঠে গত ১৫ এপ্রিল দুপুরে৷ শ্যামল সেদিন ছিলেন কাজে৷ দুই সন্তান সেসময় স্কুলে। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা তুলতে ব্যাংকে যাওয়ার কথা শাশুড়িকে জানিয়ে সেদিন বাড়ি থেকে বের হন নিরুপমা। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি তাঁর। দিনশেষে বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে খুঁজতে হন্যে হন শ্যামল।
আত্মীয়স্বজনদের পাশাপাশি খবর নেওয়া হয় ধাপড়া এলাকায় বধূর বাপের বাড়িতেও। সেদিন দুপুর থেকেই মোবাইল সুইচড অফ। স্ত্রীকে খুঁজতে ঘরের সঞ্চয়ে হাত দিতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠে তরুণের। কষ্টের উপার্জন থেকে সঞ্চিত ৪২ হাজার টাকাও গায়েব বধূর মতোই৷ বুঝতে অসুবিধা হয় না, পরিকল্পিতভাবেই ঘর ছেড়েছে বধূ। ১৬ এপ্রিল ধূপগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ জানান স্বামী। আজও পুলিশ খুঁজে পায়নি স্ত্রীকে।
দম্পতির প্রতিবেশী প্রৌঢ়া মিনু রায় বলেন, ‘আগের দিন পয়লা বৈশাখে বেশ হাসিখুশিই দেখলাম। পরদিন সোমবার দুপুরে সেজেগুজে বের হল। জিজ্ঞেস করায় জানাল লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের কিছু টাকা তুলতে যাচ্ছে। এরপরই আর দেখা যায়নি।’
ধূপগুড়ি থানা সূত্রে খবর, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে নিরুদ্দেশ বধূর খোঁজে করণীয় সমস্ত পদক্ষেপ করা হয়েছে। বধূর মোবাইল ট্র্যাক করার চেষ্টাও চলছে। যদিও পুলিশ সেভাবে সক্রিয় না বলেই আক্ষেপ বধূর পরিবারের। ফলে এক প্রতিবেশীর মোবাইল থেকে বধূর সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা ছবি প্রিন্ট করিয়ে এনেছেন শ্যামল৷ দুই সন্তানকে রান্না করে খাইয়ে প্রতিবেশীদের কাছে রেখে রোজ সেই ছবি হাতে স্ত্রী খুঁজতে বের হচ্ছেন রাজমিস্ত্রির হেল্পার স্বামী।