মানিকচক: ফের বিপুল সংখ্যায় ব্যালট উদ্ধার। এবার ঘটনাস্থল মানিকচকের মথুরাপুর। মানিকচক বিএসএস হাই স্কুলেই ছিল মানিকচক ব্লকের ভোট গণনা কেন্দ্র। এই গণনা কেন্দ্রেই গত ১১ জুলাই তিনটি জেলা পরিষদ আসন, ৩২টি পঞ্চায়েত সমিতির আসন ও ১১ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোট গণনা হয়। আর এই ভোট গণনা কেন্দ্র থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে বোচাহি দিঘির পাশ থেকেই এদিন প্রচুর সংখ্যক ব্যালট উদ্ধার হয়। উদ্ধারের ঘটনা চাউর হতেই ঘটনাস্থলে আসেন ২৮ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি গৌরচন্দ্র মণ্ডল, এই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দেবজ্যোতি সিনহা, ২৯ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের জোট প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিনের স্বামী তথা কংগ্রেস নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। কাতারে কাতারে মানুষও চলে আসেন এলাকায়। বিজেপির দাবি প্রায় ৫০০-র বেশি ব্যালট উদ্ধার হয়েছে। সবগুলি ব্যালটে ২৮ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের বিজেপি প্রার্থী গৌড়চন্দ্র মণ্ডলের পাশে পদ্ম প্রতীকে ভোট পড়েছে। পুলিশের সামনেই ব্যালটগুলি উদ্ধার করে নিজেদের হেপাজতে নেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাদের দাবি, উদ্ধার হওয়া প্রতিটি ব্যালটে বিজেপির প্রতীকে ভোট পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার মানিকচক বিডিও অফিস চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিজেপি। মানিকচকের বিডিওকে ডেপুটেশনও দেওয়া হয়। বিজেপির অভিযোগ, মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রের নির্দেশে প্রশাসনিক কর্তাদের সহায়তায় কারচুপি করে তৃণমূলকে জেতানো হয়েছে। উত্তর চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মানিকনগর বুথে মোট ভোটার ১১০৪। কিন্তু গণনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে সেই বুথে মোট ভোট পড়েছে ১২৮০। এতেই সন্দেহের কারণ দেখছে বিজেপি নেতারা। গণনার দিনই মানিকচকের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্রের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধী নেতারা। তাঁকে ঘিরে গণনাকেন্দ্রে বিক্ষোভও হয়। এদিন প্রচুর সংখ্যক ব্যালট উদ্ধার হওয়ায় তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন বিরোধীরা।
২৮ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের বিজেপি প্রার্থী গৌড়চন্দ্র মণ্ডল অভিযোগ করেন, ‘চক্রান্ত করে আমাদের হারানো হয়েছে। নবান্নের নির্দেশে ব্যালট বক্স পরিবর্তন করা হয়েছে।’ সিপিএম নেতা তথা ২৮ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থী দেবজ্যোতি সিনহা দাবি করেন, ‘ভোটের নামে প্রহসন করেছে তৃণমূল। গণনার সময় প্রদত্ত ভোটের বহর দেখে আমরা সন্দেহ করেছিলাম ব্যালট বক্স পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কোনও প্রমাণ না পাওয়ায় আমরা চুপ ছিলাম। এখন হাতে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। ২০১৮ সালে আমাদের চোখের সামনে আমাদের এজেন্টকে মেরে গণনা কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিয়ে ভোট লুঠ করেছিল তৃণমূল। এবার সকলের অলক্ষ্যে ব্যালট বক্স পরিবর্তন করে আমাদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা মহামান্য আদালতের দ্বারস্থ হব এবং পুনরায় মানিকচক ব্লকে ভোট গ্রহণের দাবি জানাব।’ কংগ্রেস নেতা মোয়াজ্জেম হোসেনের দাবি, ‘আমরা খবর পেয়েছি সিল করা ব্যালট বক্স গণনাকেন্দ্র থেকে প্রশাসনিক কর্তাদের সহায়তায় পাচার হয়েছে। আর সেই ব্যালট বক্সের পরিবর্তে তৃণমূলের ছাপ্পা মারা ব্যালট বক্স স্ট্রং রুমে স্থান পেয়েছে। শাসক দল বুঝতে পেরেছে যে ভোটে সাধারণ মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষের ভোটে তারা জিততে পারবে না। তাই এমন নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটিয়েছে শাসক দল।’