অরুণ ঝা, ইসলামপুর: এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। ক্যানসারের(Cancer) মতো দুরারোগ্য ব্যাধির সঙ্গে কঠিন লড়াই। ৩০টি কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন নিয়েছে সে। তারপরেও এবার মাধ্যমিকে(Madhyamik Result 2024) ৭১ শতাংশ নম্বর পেয়েছে শৈবাল মুর্মু। তার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়ার। ক্যানসারের শিকার শৈবাল ইসলামপুর হাইস্কুলের ছাত্র।
গত মঙ্গলবার ৩০ নম্বর কেমো নিয়ে সে মুম্বইয়ের টাটা হাসপাতাল থেকে ইসলামপুর ফিরেছে। বুধবার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সলিমুদ্দিন আহমেদ স্কুলে ডেকে শৈবালকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। আবেগতাড়িত হয়ে প্রিয় ছাত্রকে বুকে জড়িয়ে ধরে তিনি বলছেন, ‘শৈবাল ৯০ শতাংশের ওপরে নম্বর পাবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। তাই ওকে আলাদা নজরে রেখেছিলাম।’ কিন্তু ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার পর গত এক বছর সে মুম্বইতেই কাটিয়েছে।
চিকিৎসা চলাকালীন শৈবাল টেস্ট দিয়েছিল। প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শৈবাল ৭১ শতাংশ নম্বর পেয়ে আমাদের গর্বিত করেছে। এই স্কুলেই সে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হবে। আমরা ওর পাশে আছি।’
শৈবালের মোট প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৪। যদিও সে সমস্ত উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়ন করাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শৈবালের বাবা গোপাল মুর্মু করণদিঘি ব্লকের পৌটি হাইস্কুলে জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক। কিন্তু নিজের জীবনের গণিত যে এভাবে আচমকা ওলটপালট হয়ে যাবে, তা ভাবতে পারেননি গোপাল। বলছেন, ‘গতবছর জুলাই মাসে ছেলের বাঁ পায়ের হাঁটুর নীচের হাড়ে ক্যানসার ধরা পড়ে। সেই থেকে মুম্বই টাটা হাসপাতালে ওর চিকিৎসা চলছে। ও যে পরীক্ষা দিতে পারবে, তা আমরা ভাবতেও পারিনি। কিন্তু ওর প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর স্কুল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার ফলেই আজ ছেলের এই সাফল্য।
গোপাল মূলত চোপড়া(Chopra) থানার মৌলানিগছের বাসিন্দা। ছেলের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি ইসলামপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। ছেলে যাতে ভালো করে পড়াশোনা করতে পারে, সে কারণে রোজ প্রায় ১০০ কিমি বাইকে যাওয়া-আসা করে শিক্ষকতা চালিয়ে গিয়েছেন।
শৈবালের মা শেফালি সোরেন বাড়ির কাজ সামলান। পাশাপাশি শৈবালের এক ভাই রয়েছে। সে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। দুই ছেলেকে দেখভালের দায়িত্ব মায়ের। যখন বাবা পারেন না, তখন শৈবালকে মুম্বইতে নিয়ে যান মা। এভাবেই শৈবালের লড়াইয়ের সঙ্গে যোগ্য সংগত দিয়ে আসছেন দম্পতি।
শৈবাল বলছে, ‘বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। বিশ্বাস করুন, আমি একফোঁটা ভয় পাইনি। এই যুদ্ধের শেষ দেখে ছাড়ব। আমি জয়ী হবই, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। বাবা-মা এবং এত মানুষের প্রার্থনা বিফলে যেতে দেব না।’
গোপাল জানাচ্ছেন, এখনও পর্যন্ত শৈবালের চিকিৎসার জন্য ১০ লক্ষের উপর টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে ছেলেকে বাঁচানোর সমস্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। হার মানতে নারাজ গোপাল প্রতিনিয়ত ছেলেকে সাহস জুগিয়ে চলেছেন।