শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটাঃ কেন্দ্রীয় বাজেটে জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকাকরণে (Cancer vaccine) ৯-১৪ বছর বয়সি মেয়েদের উৎসাহ জোগানোর ঘোষণা করা হয়েছে। আর তাতেই আশার আলো দেখছে চা বলয়। উত্তরবঙ্গের চা বাগানের মহিলাদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন এনজিও, সমাজসেবী সংস্থাগুলিও এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, জরায়ুমুখ ক্যানসারের (cervical cancer) হার স্তন ক্যানসারের থেকেও বেশি। দৃষ্টিগোচর হয় না দেখে তা প্রায়শই ধরা পড়ে অনেক দেরিতে। এক্ষেত্রে কাজ করে নানা ধরনের অসচেতনতা। কেন্দ্রীয় সরকার টিকাকরণের ক্ষেত্রে ঠিক কী করবে সে ব্যাপারে বাজেটে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। তবে এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগে টিকাকরণ চালু হবে এমনটাই ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। যদি সত্যিই বিষয়টি বাস্তবায়িত হয় তবে অকালে ঝরে পড়া বহু মহিলার প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে বলে স্বাস্থ্য মহল জানাচ্ছে।
বিশিষ্ট প্যাথলজিস্ট ডাঃ কল্যাণ খান বলেন, ‘টিকাকরণের ব্যবস্থা চালু হলে এই ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আমরা বহুদূর এগিয়ে যেতে পারব। বহু উন্নত দেশে সরকারি উদ্যোগেই টিকার ব্যবস্থা চালু আছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, সার্ভিকাল ক্যানসার নামে পরিচিত এই মারণ রোগটির পেছনে রয়েছে এক ধরনের ভাইরাস। যার নাম হিউম্যান পোপেলমা ভাইরাস। খোলাবাজারে এই ক্যানসারের টিকা কিনতে পাওয়া গেলেও তার দাম সকলের সাধ্যের মধ্যে নয়। সরকারি উদ্যোগে যদি টিকা দেওয়া যায়, তবে প্রত্যেকেই তা নিতে পারবেন। বাজেটে অবশ্য ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।
চা মহল জানাচ্ছে, বাগানগুলিতে এখনও বহু মহিলা ঋতুকালীন সময়ে অস্বাস্থ্যকর নানা উপায় অবলম্বন করেন। জরায়ুমুখ ক্যানসারের একটি কারণ সেটাও হতে পারে। কয়েক বছর আগে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চা বাগান ঘেরা চম্পাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এব্যাপারে একটি সমীক্ষা করা হয়। তাতে উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছিল। বর্তমানে বিভিন্ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র বা সুস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে জরায়ুমুখ ক্যানসার নির্ণয়ের ব্যবস্থা থাকলেও টিকাকরণ চালু হয়নি।
চা বাগান বিশেষজ্ঞ রামঅবতার শর্মার কথায়, ‘আমাদের মতো দেশে টিকাগ্রহণে সবার অংশগ্রহণ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বা উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়। করোনার টিকার সময়ই তা আরও একবার প্রমাণ হয়েছিল। এবার যদি জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকা দেওয়া হয়, তবে চা বাগানের মতো প্রান্তিক এলাকার লক্ষ লক্ষ আজকের তরুণী ও ভবিষ্যতের মায়েরা উপকৃত হবেন।’
একই সুরে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করা সমাজসেবী সংগঠন ডুয়ার্স জাগরণের কর্ণধার ভিক্টর বসু বলেন, ‘এটা সময়ের চাহিদা। টিকাকরণের বিষয়টি কেন্দ্রের আওতাধীন।’ দ্রুত এই টিকা চালু হোক সেই দাবি জানিয়েছেন তিনি।