শিলিগুড়ি: ওষুধের বিক্রি বাড়াতে চিকিৎসকদের প্রচুর উপহার দেয় কোম্পানিগুলি। শুধু উপহারই নয়, বিদেশ ভ্রমণের পুরো ব্যবস্থা, বিনামূল্যে প্রচুর ওষুধ চিকিৎসকদের দেওয়া হয়। এবার সেই প্রথায় রাশ টানছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রের সার ও রাসায়নিক মন্ত্রকের অধীনস্থ ফার্মাসিউটিক্যালস বিভাগের তরফে জারি করা ইউনিফর্ম কোড ফর ফার্মাসিউটিক্যালস মার্কেটিং প্র্যাকটিসেসে (ইউসিপিএমপি) জানানো হয়েছে, এখন থেকে ওষুধের কোম্পানিগুলি নিজেদের ব্যবসার সুবিধার্থে চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনও উপহার দিতে পারবে না। দেশ-বিদেশ ভ্রমণ, রেল, বিমানের টিকিট কেটে দিতে পারবে না। চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) কেন্দ্রের এই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছে।
এব্যাপারে শিলিগুড়ির বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট ডাঃ বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, ‘খুব ভালো সিদ্ধান্ত। ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পািন, চিকিৎসক সহ অন্য চিকিৎসাকর্মী- প্রত্যেকের লক্ষ্য রোগীকে সুস্থ করে তোলা। তাই রোগীদের স্বার্থেই এই নির্দেশিকা বলে আমার মনে হয়।’
নির্দেশিকাকে সমর্থন জানিয়ে আইএমএ’র শিলিগুড়ি শাখার সম্পাদক ডঃ শঙ্খ সেন বলেন, ‘চিকিৎসকদের উপঢৌকন নেওয়া নিয়ে আগেই নির্দেশিকা ছিল। এবার ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলিকে কেন্দ্র এই নির্দেশ দিয়েছে। আমরা এই নির্দেশিকাকে সমর্থন করছি।’
প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে ওষুধ কোম্পানিগুলি দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসকদের প্রচুর সুযোগসুবিধা দিচ্ছে। লক্ষ্য একটাই, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ওষুধ চিকিৎসকরা যাতে রোগীর প্রেসক্রিপশনে লেখেন। চিকিৎসকদের প্রচুর ওষুধ ফ্রি স্যাম্পল হিসাবে দেওয়া হয়। এছাড়া ডায়েরি, কলম থেকে শুরু করে গৃহসজ্জার বিভিন্ন জিনিস এবং বছরভর বিভিন্ন উৎসবেও উপঢৌকন দেওয়া হয়। কয়েক বছর ধরে চিকিৎসকদের বছরে একবার দেশ এবং বিদেশে সপরিবারে ভ্রমণেও পাঠানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে এর বাইরেও ল্যাবরেটরির কমিশনের মতোই চিকিৎসকদের কমিশন প্রথাও চালু রয়েছে।
নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, শুধুমাত্র কোনও চিকিৎসককে সেমিনারে বক্তব্য রাখার জন্য দেশ-বিদেশে নিয়ে যাওয়ার খরচ দিতে পারে ওষুধ কোম্পানিগুলি। তবে, সেমিনারের ডেলিগেটস অর্থাৎ দর্শক করে নিয়ে যাওয়া যাবে না। সার ও রাসায়নিক মন্ত্রকের বক্তব্য, সঠিক ওষুধ সঠিক রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার হওয়া প্রয়োজন। জোর করে কোনও রোগীকেই ইচ্ছাকৃতভাবে ওষুধ চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু চিকিৎসকদের একটা অংশ ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ঠিকঠাক না বুঝেই রোগীকে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ দিচ্ছেন। চিকিৎসকদের সুবিধা দিতে গিয়ে প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিও ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। এটা বন্ধ করাই লক্ষ্য।
কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোম্পানি বছরে কত ওষুধ তৈরি করছে, কত ওষুধ বাজারে বিক্রি হচ্ছে, কত ওষুধ বিনামূল্যে চিকিৎসদের দেওয়া হচ্ছে (ফ্রি স্যাম্পল) তার সব তথ্য আর্থিক বছরের শেষে সরকারের কাছে জমা দিতে হবে।
এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, এমন কোনও চিকিৎসককে কোনও ওষুধ দেওয়া যাবে না, যিনি সেই রোগ বা ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। পাশাপাশি চিকিৎসকদের বিনামূল্যে দেওয়া ওষুধের মূল্য প্রস্তুতকারী সংস্থার বার্ষিক বিক্রির দুই শতাংশের বেশি করা যাবে না।