প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান পাঠিয়ে ইতিহাস গড়েছে ভারত। আন্তর্জাতিক মানের এই কৃতিত্ব, স্বাভাবিকভাবেই পুজোর ফোকাল থিম হিসেবে প্রজেক্ট করতে পিছপা হয়নি দিল্লির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বারোয়ারী পুজো কমিটি৷ তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে, দিল্লির বেশ কয়েকটি জায়গায় বড় পুজো কমিটিগুলি এবার চন্দ্র অভিযান থিম সম্পন্ন পুজো মন্ডপ তৈরির উপরে জোর দিয়েছেন৷ এর মধ্যে অন্যতম হল করোলবাগ পুুজো সমিতি৷
উল্লেখ্য, এবছর ৮২ বছরে পা দিল করোলবাগ পুজো কমিটি৷ গতবার স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে লালকেল্লার আদলে পুজো মন্ডপ বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার পর, এবার করোলবাগের পুজো মন্ডপ তৈরি করা হচ্ছে চন্দ্রযান ৩-এর আদলে৷ এর সঙ্গে থাকছে এশিয়ান গেমসে ভারতের সাফল্য৷ মন্ডপ সজ্জায় বাদ যায়নি নয়াদিল্লিতে আয়োজিত জি-২০ শিখর সম্মেলনও৷ শুধু করোলবাগই নয়, চন্দ্র অভিযানকে ফোকাল থিম করে মণ্ডপ গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছে গ্রেটার নয়ডা সহ মিন্টো রোড তথা মহাবীর এনক্লেভ সার্বজনীন পুজো কমিটির মতো দিল্লির অন্যতম নামি-দামি বায়োয়ারিগুলি। প্রতিবারের মতই এবারও এখানকার প্রতিমা থেকে শুরু করে মন্ডপ শয্যার সঙ্গে যুক্ত আছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দিল্লিতে আসা বাঙালি শিল্পী ও কারিগররা৷ এবারেও মা দুর্গার জন্য বিশেষ বেনারসী শাড়ি পুজো উদ্যোক্তারা নিয়ে এসেছেন কলকাতা থেকেই৷ পুজোর প্রত্যেক দিন অঞ্জলির পরে থাকছে পংক্তি ভোজনের আয়োজন, যেখানে মন্ডপে আগত দর্শনার্থীদের পাত পেড়ে খাওয়ানোর পরে গড়ে ১০-১২ হাজার লোককে ভোগ বিতরণ করা হয়৷
তবে চন্দ্রযান অভিযান নিয়ে দিল্লিবাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হলেও, এবারের পুজোর বাজেটের টাকা যোগাড় করতে গিয়ে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছেন, সাফ জানিয়েছেন করোলবাগ পুজো সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীপক ভৌমিক৷ তাঁর কথায়, ‘দিল্লির বারোয়ারি পুজোর প্রধান বৈশিষ্ট হল মোটা অঙ্কের অনুদান এবং বিজ্ঞাপন৷ এই দুটিতেই এবার প্রবল ঘাটতি দেখা দিচ্ছে৷ সবাই মিলে চেষ্টা করছি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার, দেখা যাক কি হয়৷’ গ্রেটার নয়ডা পুুজো সমিতির সভাপতি সুনির্মল সেন জানান, বিগত বছর গুলির মত এবারও কলকাতা ও দিল্লির কয়েকজন বাছাই করা শিল্পীদের নিয়েই তাঁরা পুজোর প্রতিদিন সন্ধ্যেয় নিজেদের মন্ডপ প্রাঙ্গনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ডালি সাজাবেন৷ এই আয়োজনেও থাকছে বাজেট কমানোর প্রভাব, খোলাখুলিই স্বীকার করছেন দিল্লির অধিকাংশ পুজো সমিতির কর্তা ব্যক্তিরা৷
কিন্তু কেন এরকম আর্থিক প্রতিকূলতা? আসলে, সাধ আর সাধ্যের মেল বন্ধন ঘটানো যে কত কঠিন, এবছর তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন রাজধানী দিল্লির বারোয়ারি পুজো উদ্যোক্তারা৷ কলকাতা তথা বাংলার অন্যান্য জেলার মতই দিল্লির এক প্রান্ত থেকে শুরু করে অপর প্রান্তের সর্বত্র সর্বজনীন দুর্গা পুজোর উদ্যোক্তা পুজো কমিটি গুলির মধ্যে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলে প্রতি বছর৷ এ বছরও তার ব্যতিক্রম নেই৷ এই লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে নেমেই রাতের ঘুম চলে যেতে বসেছে রাজধানী দিল্লির পুজো উদ্যোক্তাদের অনেকেরই৷ কয়েক মাসের মধ্যেই লোকসভার ভোট৷ প্রত্যাবর্তন বনাম পরিবর্তনের লড়াইয়ে গোটা দেশের আমজনতা মেতে উঠবে৷ আগামী পাঁচ বছরের জন্য দিল্লির মসনদে বসবেন কে, জানতে আগ্রহী গোটা বিশ্ব৷ তার আগে দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বড় ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা অঙ্কের অনুদান পাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে দিল্লির বেশ কয়েকটি বড় দুর্গাপুজো কমিটির কেষ্ট বিষ্টুদের৷ এই ব্যবসায়ীরা খোলাখুলিই জানাচ্ছেন শিয়রে লোকসভা ভোটের সমন নিয়ে তাঁরা এবার মা দুর্গার আরাধনায় হাত উপুর করে টাকা ঢালতে অপারগ৷ এর জেরেই টান পড়েছে বারোয়ারি পুজোর বাজেটে৷ ওদিকে কোথাও কেদারনাথ, কোথাও বা চন্দ্র অভিযান, আবার কোথাও বা শুধুই সাবেকিয়ানা নির্ভর করে মা দুর্গার পুজো করার ধুম চড়েছে৷ কিভাবে গোটা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে তা ভেবেই অস্থির দিল্লির বাঙালি পুজো উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশ৷