পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি: দল পাশে আছে নাকি নেই? সোমবার জলপাইগুড়ির সিজেএম আদালত তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে দুদিনের জন্য পুলিশ হেপাজতে পাঠানোর পর এবিষয়ে খোদ ওই নেতাই ধন্দে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। এমনটা অবশ্য মনে করারই কথা। রাজার চালেই এদিন সৈকত আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন। বিকেল পর্যন্ত আইনজীবীদের পাশাপাশি জলপাইগুড়ি পুরসভার বিভিন্ন কাউন্সিলারের সঙ্গেই তাঁকে জমিয়ে আড্ডা মারতে দেখা গিয়েছে। হয়তো সবকিছু অনুকূলে যাবে বলেই তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস ছিল। কিন্তু আদালত রায় দিতেই পরিস্থিতি প্রতিকূল। সৈকতকে নিয়ে দলের ভিন্নধর্মী অবস্থান পরিস্থিতিকে আরও প্রতিকূল করে তুলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজনীতিতে সৈকতের ভবিষ্যৎ কী? এই প্রশ্নে তৃণমূল কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি জেলা মুখপাত্র দুলাল দেবনাথ বললেন, বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তবে দল এখনও সৈকতের পাশেই রয়েছে। দুলাল দলের পাশে থাকার কথা বললেও দলের জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপ কিন্তু মোটেও সৈকতকে বরাভয় দিচ্ছেন না। ঘাসফুল শিবিরের জলপাইগুড়ি সভানেত্রী যথেষ্টই সতর্ক। তাঁর সাবধানি মন্তব্য, এটা একটা আইনি প্রক্রিয়া। যা বলার রাজ্য নেতৃত্বই বলবে। সংশ্লিষ্ট মহলের সবারই জানা সৈকতের সঙ্গে মহুয়ার সম্পর্ক মোটেও ভালো নয়। সৈকত প্রসঙ্গে তিনি যে আগ বাড়িয়ে ইতিবাচক কিছু বলবেন না তা সবারই জানা ছিল। তা সত্ত্বেও এদিন তিনি অন্য কিছু বলতে পারেন বলে অনেকেই মনে মনে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত মহুয়ার সাবধানি মন্তব্যে সৈকত অনুরাগীরা হতাশ। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলার সাধারণ সম্পাদক অজয় সাহার অবশ্য বক্তব্য, সৈকত চট্টোপাধ্যায় রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছেন।
ভট্টাচার্য দম্পতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার রেশে সৈকত গত ১৬ জুন থেকে বেপাত্তা ছিলেন। চার মাস ধরে দলের পাশাপাশি পুরসভার সঙ্গে অন্তত প্রকাশ্যে তাঁর কোনও সম্পর্ক ছিল না। আদালতের নির্দেশে পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় সেদিকে অবশ্য দলের সতর্ক সৃষ্টি ছিল। এদিন আদালত চত্বরে হাজির তৃণমূল নেতাদের ঘনঘন ফোন করে ও এজলাসে লোক পাঠিয়ে পরিস্থিতির খোঁজ নিতে দেখা গিয়েছে। পরিস্থিতি সৈকতের অনুকূলেই যাবে বলে এদিন তাঁদের অনেককে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত আদালত সৈকতের বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার পর তাঁরা কার্যত স্পিকটি-নট। তাহলে কি দল সৈকতের পাশে নাকি নেই? মহুয়ার মতোই দলের এক নেতার সাবধানি প্রতিক্রিয়া, গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে এবারে আমাদের চলতে হবে। তবে দলের একটি অংশের মন্তব্য, আদালতের নির্দেশে সৈকতকে যদি শেষপর্যন্ত সংশোধনাগারে যেতে হয় তবে তাঁর যুব কংগ্রেসের সভাপতির পদ যাওয়া একপ্রকার নিশ্চিত। পাশাপাশি, জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেযারম্যানের পদ থেকেও তাঁকে নিশ্চিতভাবে সরানো হবে। এককথায়, এই মুহূতে সৈকতের রাজনৈতিক কেরিয়ার ঘোর অন্ধকারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিরোধীরা এতদিন পর্যন্ত খোলাখুলি সৈকতের সমালোচনা করলেও এদিন আদালতের রায়ের পর তারাও বেশ সাবধানি। বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামীর বক্তব্য, বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। কেউ যত বড় প্রভাবশালী হোন না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে নন। এদিনের ঘটনা তারই প্রমাণ। আশা করি দম্পতির মেয়ে তানিয়া ভট্টাচার্য সুবিচার পাবেন। জেলা কংগ্রেস সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্তেরও একই বিশ্বাস। বিচারাধীন বিষয় বলে ফরওযার্ড ব্লকের রাজ্য নেতা গোবিন্দ রায় কোনও মন্তব্য করতে চাননি।