শালকুমারহাট: দোড়গোড়ায় ভোট। তবে সেসব নিয়ে এখন ভাবার সময় নেই রামকুমার রায়, নৃপেন রায়দের। গত কয়েকদিন ধরে মাঝবয়েসি ওই তরুণরা চড়ক নিয়ে ব্যস্ত। বৃহস্পতিবার শালকুমারহাটের কলাবাড়িয়ায় রাস্তার ধারে চাষের জমিতে চড়কের মাচার জন্য বাঁশ কাটার কাজ করছিলেন তাঁরা। পাশেই আবার চয়ন ভদ্র, তাতান রায়দের মতো খুদে স্কুল পড়ুয়াদের ধুতি পরাচ্ছিলেন গৌতম রায়। মুহূর্তে সাজগোজ করে তাদের নিয়ে মাগনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন বড়রা। সবমিলিয়ে ভোটের আবহে এক অন্যরকমের ছবি।
এবার ৫৪তম বছরে পদার্পণ করল শিলবাড়িহাট-শালকুমারহাট রাজ্য সড়কের পাশে কলাবাড়িয়া মৌজার ছোট বয়রা গ্রামের মেলা। ওই মেলা শালকুমারহাট এলাকার বড় চড়ক। সেখানে আটজনকে বড়শি বিঁধে ঘোরানো হয়। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন।
চড়কমেলার জন্য চার বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেননি এলাকার বাসিন্দা হেমন্ত রায়। কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি গোটা বিষয়টি তদারকিও করছেন। তবে এই প্রথম নয়, প্রতি বছরই মেলার জন্য হেমন্ত ধানের পর আর কোনও চাষ করেন না। তাঁর কথায়, ‘আমার জমিতে বহু বছর ধরে মেলা হচ্ছে। এখন সবাই চড়কের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। ভোট নিয়ে কেউ ভাবছি না। এলাকার সবাই কাজ করছেন। ২৫ চৈত্র জাগরণ হয়েছে। সংক্রান্তিতে চড়কমেলা হবে। তরুণ প্রজন্মের চাহিদানুযায়ী ১ বৈশাখ হবে অর্কেস্ট্রার অনুষ্ঠান।’
আনন্দে খুদে পড়ুয়ারাও। ক’দিন ধরেই স্কুলে যাচ্ছে না তারা। সবাই ধুতি পরে নানারূপে সেজে হাটবাজার, পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে রোজ মাগন তুলছে। আর সেখানকার চড়কের পূজারি দীপঙ্কর রায়ের বাড়িতে দিনভর নিরামিষ খাওয়াদাওয়া চলছে। অষ্টম শ্রেণির সৌম্যজিৎ রায় বলে, ‘প্রতি বছরেই চড়কমেলার কয়েকটা দিন আনন্দ করি। এজন্য স্কুলে যাচ্ছি না। খুব মজা হয়।’ একই কথা বলে নয়ন রায়, অনীক রায়দের মতো বাকি পড়ুয়ারাও। আবার এই চড়কে ধুতি পরা শেখা হচ্ছে বলে জানায় আকাশ রায় নামে আরেক পড়ুয়া।
তবে শুধু কলাবাড়িয়ায় নয়, শালকুমারহাটের কালীবাড়ি, হলদিটারি, মুন্সিপাড়া এখন চড়কে মজে। কালীবাড়ির মেলার সঙ্গে যুক্ত পুণ্যদেব রায় বলেন, ‘ছোট থেকেই চড়কের সঙ্গে যুক্ত। তাই এই সময়ে চড়ক নিয়েই আছি। এবার চড়কের আঠারোটি খেলা দেখানোর দায়িত্ব আমার কাঁধে।’