মোথাবাড়ি: স্ট্রংরুমের পাহারাদারি নিয়ে রবিবার গোটা রাত তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় মালদার মোথাবাড়িতে। গভীর রাতে স্ট্রংরুমের সামনে মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে দেখে বিরোধীরা ব্যালট বাক্স লুটের আশঙ্কা করে। গোটা রাত বিরোধী সব দলের নেতা-কর্মীরা স্ট্রংরুমের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ভাঙচুর করা হয় কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা শাসকদলের জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থী হাসিমুদ্দিন আহমেদের গাড়ি। আক্রান্ত হন তাঁর ছেলে। এই ঘটনায় শাসক ও বিরোধীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে স্ট্রংরুম লুটের পরিকল্পনা করার অভিযোগ এনেছেন। এদিকে, গাড়ি ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় কংগ্রেসের জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থী দুলাল শেখ সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মোথাবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন হাসিমুদ্দিন সাহেবের ছেলে সাগর। তবে এই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছে মোথাবাড়ি থানার পুলিশ।
ঝামেলার সূত্রপাত স্ট্রংরুমের পাহারাদারি নিয়ে। নির্বাচনের আগেই কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লকের বিডিও বিপ্রতীম বসাক সর্বদলীয় বৈঠক করেন৷ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের তরফে তিনজন করে স্ট্রংরুমের ওয়াচ রুমে থেকে দিন-রাত পাহারা দিতে পারবেন৷ কিন্তু তার জন্য সবাইকে বিডিওর অনুমতিপত্র সঙ্গে রাখতে হবে৷ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা সেই অনুমতিপত্র ছাড়া কাউকে ওয়াচ রুমে ঢুকতে দেবেন না৷ সেই অনুযায়ী অন্যান্য দলগুলি বিডিওর অনুমতিপত্র সংগ্রহ করলেও তৃণমূল তা করেনি৷ ফলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ওয়াচ রুমে তৃণমূলের কাউকে প্রবেশ করতে দেননি৷ এই খবর পেয়েই গতকাল রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মোথাবাড়ির স্ট্রংরুমে দলবল নিয়ে হাজির হন মন্ত্রী সাবিনা৷ ছিলেন হাসিমুদ্দিন সাহেবও৷ কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা৷
এরই মধ্যে চাউর হয়ে যায়, মন্ত্রী দলবল নিয়ে স্ট্রংরুমে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করছেন৷ সেই খবর পেয়েই পিল পিল করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন৷ স্ট্রংরুমের সামনে থেকে সাবিনা সহ তৃণমূলের লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়৷ বিরোধীরা সারারাত স্ট্রংরুমের পাহারাদারি শুরু করেন৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে বিশাল পুলিশবাহিনী৷ আসে কেন্দ্রীয় বাহিনীও৷ তবে আজ সকাল পর্যন্ত এলাকা ছাড়েনি বিরোধীরা৷ অভিযোগ, সেই সময়ই হাসিমুদ্দিন আহমেদের গাড়ি ভাঙচুর করে বিরোধীরা৷ তাঁর গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়া হয়৷ বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মীকে শারীরিক নিগ্রহও করা হয় বলে অভিযোগ৷ হাসিমুদ্দিন সাহেবের বক্তব্য, কংগ্রেস পরিকল্পিতভাবে গাড়ি ভাঙচুর করেছে৷ ৩-৪ জন কর্মীকে মারধর করেছে৷ গোটা ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা পরিষদ আসনের কংগ্রেসের প্রার্থী দুলাল শেখ৷
এদিকে, কালিয়াচক ২ নম্বর ব্লক কংগ্রেস সভাপতি তথা জেলা পরিষদের প্রার্থী দুলাল শেখ বলছেন, ‘রাত ১২টার সময় স্ট্রংরুমের সামনে মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন কী করছিলেন? আমাদের কাছে খবর ছিল, তিনি কয়েকশো কর্মী নিয়ে ব্যালট বাক্স লুট করার চেষ্টা করবেন৷ গতকাল রাতে সেটাই ঘটেছিল৷ সেই খবর পেয়ে হাজার হাজার কংগ্রেস কর্মী সেখানে গিয়ে শাসকদলের ব্যালট বাক্স লুটের পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে৷ আর আমার সঙ্গে হাসিমুদ্দিনের গাড়ি ভাঙচুরের কোনও সম্পর্ক নেই৷ এসব ফালতু অভিযোগ৷’
খোদ মন্ত্রী সাবিনা বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা বিরোধীদের হয়ে কাজ করছে৷ মোথাবাড়ি হাইস্কুলের স্ট্রংরুমের পাহারায় সব দলের লোকজনকে থাকতে দেওয়া হলেও আমাদের কাউকে সেখানে ঢুকতে দেয়নি তারা৷ আমাদের প্রার্থীকেও ঢুকতে দেয়নি৷ সিসিটিভির ক্যামেরার তার বাইরে ছেঁড়া ছিল৷ গোটা ঘটনায় বিডিও নিজেও তাঁর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না৷ গতকাল রাতে আমার কিছু হয়নি৷ তবে আমাদের লোকজনকে ওরা বেধড়ক মারধর করেছে৷ ক্ষমতায় আছি বলে আমরা বিরোধীদের সমস্ত অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করছি।’