জলপাইগুড়ি: রানিনগর শিল্পাঞ্চলে কে ছড়ি ঘোরাবে তা নিয়ে দুই শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে। একটি তো তৃণমূলেরই ইউনিয়ন। অপরটি নিজেদের তৃণমূলেরই বলে দাবি করছে। কয়েকদিন আগেই আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় রানিনগরের তৃণমূল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নকে তাদের তরফে স্বীকৃতি কখনোই দেওয়া হয়নি বলে জেলা সভাপতিকে লিখিত জানিয়ে দেন। কিন্তু ওই শাখা ইউনিয়নের মাথা জেলা তৃণমূলের এসসি-এসটি-ওবিসি সেলের সভাপতি কৃষ্ণ দাস হুংকার দিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের ইউনিয়ন আগের মতোই পরিচালনা করবেন। তাঁদের ইউনিয়নকে প্রাক্তন আইএনটিটিইউসি নেত্রী দোলা সেন অনুমতি দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় রানিনগর শিল্পাঞ্চলে আইএনটিটিইউসির দুই গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে উঠে এসেছে।
রানিনগর শিল্পাঞ্চলে কৃষ্ণ দাসকে উপদেষ্টা করেই আইএনটিটিইউসির কিছু নেতা তৃণমূল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নামে শিল্পাঞ্চলের সর্বত্র দাপট দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এমনকি কয়েকদিন আগে কোকাকোলার বটলিং প্ল্যান্টের মালিকানা হস্তান্তরের দিন গেটে আইএনটিটিইউসির ব্যানারে কৃষ্ণ গোষ্ঠীর লোকজন ধর্মঘট করেছিলেন। সেদিন রাতে মালিকপক্ষের সঙ্গে কৃষ্ণই বৈঠক করেছিলেন।
এছাড়া, ইন্ডিয়ান অয়েলের বটলিং প্ল্যান্টে একদিনের ধর্মঘট কৃষ্ণ দাস নিজে ডেকে নিজেই প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। নতুন একটি হ্যাচারি শিল্প ইউনিট নির্মাণের আগে সরাসরি তৃণমূলের বিধায়ক খগেশ্বর রায়ের অনুগামীদের সঙ্গে কৃষ্ণ দাসের গোষ্ঠীর লোকজনের ঝামেলা সহ একাধিক ঘটনা ইতিপূর্বে ঘটে গিয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় এই সংগঠন নিয়ে তৃণমূল অস্বস্তিতে পড়েছিল। একসময় কৃষ্ণের ইউনিয়নকে প্রতিরোধ করতে জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি রাজেশ লাকড়াকেও রানিনগরে আসতে হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও আইএনটিটিইউসির নাম ভাঙিয়ে কৃষ্ণ দাসের লোকজন এই ইউনিয়ন করে যাচ্ছেন বলে দলের কাছে অভিযোগ আসে।
আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি রাজেশ লাকড়া বলেন, ‘তৃণমূল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন নামে কোনও শ্রমিক ইউনিয়ন জেলায় নেই। আমাদের রাজ্য নেতৃত্ব এই ধরনের ইউনিয়নের দায় অস্বীকার করেছে। শিল্পাঞ্চলে কোনও অঘটন এই ইউনিয়নের নামে ঘটলে তার দায় তাদেরই। ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত জানিয়ে দিয়েছেন, আইএনটিটিইউসির অনুমোদন ছাড়া তৃণমূলের কোনও ইউনিয়ন রানিনগরে কাজ করবে না।’
অন্যদিকে কৃষ্ণর বক্তব্য, ‘আমাদের তৃণমূল ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অনুমোদন শ্রমিক নেত্রী দোলা সেন করে দিয়েছেন। আমাদের ইউনিয়নের রাজ্য সরকারের দেওয়া রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। কে কী বলেছে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। তৃণমূলের একাধিক চা শ্রমিক ইউনিয়ন কাজ করছে। তাতে কি তৃণমূলের বদনাম হচ্ছে? আমাদের ইউনিয়ন শিল্পাঞ্চলে আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।’
তৃণমূল জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপের সোজা কথা, ‘আইএনটিটিইউসি অনুমোদন না দিলে সেই ইউনিয়ন তৃণমূলের নামে চলতে পারে না।’