প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: মণিপুর নিয়ে আলোচনার দাবিতে উত্তপ্ত হল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠক। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট বৈঠকে মণিপুরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি আলোচনার দাবিতে সরব হন বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তাঁদের দাবিতে কর্ণপাত করেননি কমিটি চেয়ারম্যান তথা কেন্দ্রীয় শাসক শিবিরের প্রতিনিধি, প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার ব্রিজলাল। ফলস্বরূপ কেন্দ্রীয় নীতির তীব্র ভর্ৎসনা করে কমিটির বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করলেন কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সদস্য-প্রতিনিধিরা। শুধু তাই নয়, মণিপুর ইস্যুতে মোদি সরকারের চরম উদাসীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে একটি স্মারকলিপি কমিটি চেয়ারম্যান ব্রিজলালের হাতে তুলে দিয়েছেন বিরোধী দলীয় সাংসদরা। জানিয়েছেন, মণিপুর ইস্যুতে আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত কমিটির কোনও বৈঠকে যোগ দেবেন না তাঁরা।
বস্তুত, আর সপ্তাহ দুয়েক পরই শুরু হবে সংসদের বাদল অধিবেশন৷ দিল্লিতে চলছে তারই প্রস্তুতি৷ এই আবহে সাজ সাজ রব সরকার ও বিরোধী, উভয় শিবিরেই৷ আসন্ন বাদল অধিবেশনে কেন্দ্র সরকারকে কোণঠাসা করার জন্য অন্যান্য ইস্যুর পাশাপাশি মণিপুরকে যে হাতিয়ার করতে চলেছে বিরোধীরা, এদিন তার স্পষ্ট আভাস মিলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অধীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে৷ সূত্রের দাবি, মণিপুরের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সবিস্তারে আলোচনার দাবি জানান বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধি সাংসদরা৷ সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপি সাংসদ ব্রিজলাল৷ উলটে তিনি প্রস্তাব দেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কারাগারগুলির সংস্কার নিয়ে আলোচনার জন্য৷ পূর্ব নির্ধারিত এই বিষয়েই তিনি একমাত্র আলোচনার অনুমতি দিতে পারবেন, মণিপুর নিয়ে কোনও আলোচনাই হবে না এদিনের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। চেয়ারম্যান ব্রিজলাল একথা জানানোর পরে বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেন বিরোধী দলের তিন বর্ষীয়ান সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, দিগ্বিজয় সিং এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন৷
সূত্রের খবর, বৈঠক ছেড়ে বেরোনোর আগে তাঁরা একটি প্রতিবাদপত্র তুলে দিয়েছেন কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিজলালের হাতে৷ অগ্নিগর্ভ মণিপুরে জাতিগত হিংসায় প্রায় ১৪০ জনের মৃত্যু এবং কয়েক হাজার ভূমিহীন মানুষের পুনর্বাসনের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে অবিলম্বে জরুরি আলোচনায় বসা তাদের ‘নৈতিক কর্তব্য’ ও ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব’ এবং সেই দায়িত্বপালনে বাধাদানের প্রতিবাদে এই ওয়াক আউট বলে প্রতিবাদপত্রে কড়া ভাষায় উল্লেখ করেছেন বিরোধীরা, দাবি সংসদীয় সূত্রে৷
আসন্ন সংসদীয় অধিবেশনকে পাখির চোখ করে বিরোধী শিবির যে মণিপুর ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শাণাতে বদ্ধপরিকর তার আভাস মিলেছে আগেই৷ মণিপুর ইস্যুতে প্রথম থেকেই সোচ্চার ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি নিজে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শা’কে চিঠি লিখে মণিপুরে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন৷ কিন্তু তাঁকে অনুমতি দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ সূত্রের খবর, এরপরই ধারাবাহিকভাবে মণিপুরের বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং সমাজসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রত্যহ যোগাযোগ রেখে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং৷ দলীয় সূত্রে খবর, গত সপ্তাহেই তাঁর সঙ্গে মণিপুরের প্রতিনিধিদের ফোনে কথা হয়েছে৷ একইরকমভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন৷ তিনি নিজে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে অবিলম্বে কমিটির বৈঠকে মণিপুর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার দাবি জানান৷ এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে কমিটি চেয়ারম্যান ব্রিজলালকে চিঠি পাঠান বর্ষীয়ান কংগ্রেস সাংসদ দিগ্বিজয় সিংও৷
বৃহস্পতিবার মণিপুর ইস্যুতে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কোনও প্রকার আলোচনা করা হবে না এই সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন বিজেপি সাংসদ ব্রিজলাল৷ তিনি ‘অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ’ কারাগার সংস্কার ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব দিলে বিরোধীরা পালটা সোচ্চার হন মণিপুর নিয়ে৷ এমনকি তারা কমিটির সদস্য বিজেপি সাংসদ, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকেও মণিপুর ইস্যুতে সোচ্চার হওয়ার আবেদন জানান৷ বিপ্লব অবশ্য প্রত্যাশিতভাবেই মুখ খোলেননি বলে সূত্রের খবর৷ শেষে নিজেদের দাবির প্রতি অনড় থেকে তিন বর্ষীয়ান বিরোধী সাংসদ ওয়াক আউট করেন কমিটির বৈঠক থেকে। এদিনের সংসদীয় কমিটির বৈঠকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এবার সংসদীয় রণনীতি তৈরি করবে বিরোধী শিবির৷ ১৭-১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুর বিরোধী বৈঠকে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি সংসদীয় রণকৌশল নিয়েও আলোচনা হবে যেখানে দিল্লি সরকারের ক্ষমতা খর্ব করে নিয়ে আসা কেন্দ্রীয় অর্ডিন্যান্স, অভিন্ন দেওয়ানিবিধির পাশাপাশি মণিপুর ইস্যুতেও একজোট হবে বিরোধীরা৷