কোচবিহার: কোচবিহারের ছোট্ট একটি গ্রাম তল্লিগুড়ি। সেই তল্লিগুড়ি থেকে বেলজিয়ামের দূরত্বটা নেহাতই কম নয়। ছক ভাঙা নিয়মের বাইরে গিয়ে সেই তল্লিগুড়ির বাসিন্দা আরশি ঘোষ এখন ‘মিস ট্রান্সকুইন ইন্ডিয়া’-র খেতাব জিতে নিয়েছেন। শুধু তাই নয় ‘এলিজিবিটিকিউ’ সম্প্রদায়ের জন্য বেলজিয়ামে আয়োজিত মিস ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্স প্রতিযোগিতায় দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছে আরশি। ছেলে হয়েও মেয়েলি স্বভাবের জন্য ছোটবেলায় যাঁদের কাছে আরশিকে টিটকিরি শুনতে হত, তাঁরাই এখন শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। তল্লিগুড়ির আরশি পুরোদস্তুর মুম্বয়ের সেলিব্রিটি। তাঁকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই পরিজনদের।
কৃষক পরিবারের সন্তান আরশি। মাধ্যমিক পর্যন্ত তল্লিগুড়ি হাইস্কুল ও উচ্চমাধ্যমিকে কোচবিহারের রামভোলা হাইস্কুলে পড়াশোনা। কোচবিহার কলেজে স্নাতক হওয়ার পর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। আরশির কথায়, বয়স কিছুটা বাড়ার পর থেকেই সে বুঝতে পারে আর পাঁচজন ছেলের মতো তার মানসিক পরিস্থিতি এক নয়। শারীরিকভাবে ছেলে হলেও মানসিকভাবে তিনি মেয়ে হিসেবেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সচেতনতার অভাবে তাঁর এই বিষয়টিকে বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে পরিজনরা কেউই ভালোভাবে মেনে নেননি। ফলে নানা জায়গা থেকে টিটকিরি শুনতে হত। কিন্তু আরশি থেমে থাকার মানুষ নন। প্রতিকুলতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন।
কোচবিহার থেকে পাড়ি দেন মুম্বইয়ে। মডেলিং ও মেকআপ আর্টিস্টের কাজ শুরু করেন। একসময় সিদ্ধান্ত নেন সার্জারি করে পুরোপুরি ট্রান্সফর্মড হবেন। ২০১৯ সাল থেকে মুম্বইয়ের একটি নামি হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসার মধ্যে থাকার পর ২০২২ সালে ১১ ঘন্টা সময় নিয়ে সার্জারি চলে। ধীরে ধীরে সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন আরশি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নানা বিউটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য মিলতে থাকে। গত ৭ এপ্রিল ‘মিস ট্রান্সকুইন ইন্ডিয়া’-র খেতাব জিতে নিয়েছেন। এখন আন্তর্জাতিক খেতাব পাওয়ার জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে। মুম্বইয়ে কাজের ফাঁকে টেলিফোনে আরশি বলেন, ‘ছোটবেলায় বেশিরভাগ মানুষই আমাকে নিয়ে টিটকিরি করত। তখনই মনে জেদ চেপেছিল জীবনে ভালো কিছু করে দেখাব। সেই চাহিদা থেকেই এগিয়ে চলেছি। আমার দিদি খুব সহযোগিতা করেছে। আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষরা যাতে সবসময় মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য কঠিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’