শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: একের পর এক গাছ কাটার কুপ্রভাব কতটা হতে পারে তা কয়েকদিনের তীব্র গরমে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। একদিকে যখন পরিবেশের কথা না ভেবেই যথেষ্ট পরিমাণে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। তখন কার্যত নিঃশব্দেই পরিবেশের জন্য কাজ করে চলেছেন কোচবিহারের (Cooch Behar) বজরঙ্গ পারিখ। এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার গাছ লাগিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন সকালে সাইকেলে দা, খন্তা, বস্তা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন গাছ লাগাতে। নিয়ম মেনে করেন পরিচর্যাও। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে যখন কেউ তাঁর লাগানো গাছের ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নেন, তখন যেন দূর থেকেও তৃপ্তি পান বজরঙ্গ।
কোচবিহার রেলস্টেশন সংলগ্ন ২ নম্বর কালীঘাট রোডের বাসিন্দা ৬৩ বছরের বজরঙ্গ। ভবানীগঞ্জ বাজার চত্বরে তাঁর একটি পোশাকের দোকান রয়েছে। পরিবার ও দোকান সামলানো তাঁর কাছে দ্বিতীয় কাজ। প্রথম কাজ হল গাছ লাগানো। মাঝেমধ্যে নয়, বরং নিয়ম মেনে নিয়মিত গাছ লাগান তিনি। বজরঙ্গ জানালেন, ২০০৫ সাল থেকে তিনি গাছ লাগানো শুরু করেছেন। প্রথমদিকে শুধুমাত্র ফুল ও ফলের গাছ লাগাতেন। কিছু মানুষকে চারাগাছ দিতেন লাগানোর জন্য। পরবর্তীতে সেই গাছের পাশাপাশি বট, অশ্বত্থ, নিম সহ বৃক্ষ ধরনের গাছের চারা লাগানো শুরু করেন। কোচবিহার রেলস্টেশন চত্বর তো বটেই তোর্ষা সংলগ্ন এলাকা, সাহেব কলোনি, কালীঘাট রোড, লংকাবর, বিবেকানন্দ স্ট্রিট, খাগড়াবাড়ি, বেলতলা, চালতাতলা সহ শহর ও সংলগ্ন এলাকায় বহু গাছ লাগিয়েছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগ তো বটেই, সেইসঙ্গে কোচবিহার পরিবেশ সংরক্ষণ সংস্থা নামে একটি সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি। সংগঠনগতভাবেও নানা জায়গায় গাছ লাগান।
এত চারাগাছ পান কোথায়? উত্তরে বজরঙ্গ বললেন, ‘বাড়িতে নিজেই চারাগাছ তৈরি করি। এখনও তৈরি অবস্থায় একশোটির বেশি চারাগাছ আছে। সকালে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ব্যাগের মধ্যে চারাগাছ, মাটি খোঁড়ার যন্ত্র থাকে। গাছ লাগিয়ে বস্তা বা পুরোনো শাড়ির টুকরো দিয়ে গাছের চারদিক ঘিরে দিই। পরে আবার সেই গাছ পরিচর্যাও করি।’
বজরঙ্গের এখন লক্ষ্য একটি বড় বাগান তৈরি করা। যেখানে থাকবে বট, অশ্বত্থ থেকে শুরু করে আম, জাম, কাঁঠাল সবই। ঠান্ডা বাতাস, পাখির ডাক সবই থাকবে সেখানে। বজরঙ্গ বলেছেন, ‘তোর্ষার পাড়ে একটি খণ্ডবন তৈরির ইচ্ছে রয়েছে। এমনিতেই ওখানে অনেক গাছ লাগিয়েছি। ইচ্ছে রয়েছে একটি জায়গায় সব ধরনের অনেক গাছ লাগিয়ে বনের মতো একটি জায়গা তৈরি করার।’
পরিবেশবিদদের কথায়, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য গাছের কোনও বিকল্প নেই। ক্রমেই তাপমাত্রা বাড়তে থাকার অন্যতম কারণ হল বৃক্ষচ্ছেদন। এই পরিস্থিতিতে বৃক্ষরোপণের জন্য বজরঙ্গের মতো প্রত্যেককেই এগিয়ে আসা প্রয়োজন। গাছ রক্ষার জন্য বজরঙ্গের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।