শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: কোচবিহার (Coochbehar) এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (MJN Medical College) নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু (Nursing Student Death) হয়েছে। র্যাগিংয়ের (Ragging) শিকার হয়ে কোচবিহার শহর লাগোয়া কালীঘাট রোডের শ্যামসুন্দরপল্লির বাসিন্দা মন্দিরা সরকার (২২) আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের অভিযোগ, সিনিয়ার ছাত্রীরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে জুনিয়ারদের র্যাগিং করেন। জল খেতে হলেও সিনিয়ারদের অনুমতি নিয়ে হয়। ওই ছাত্রীর মোবাইল ফোন ঘেঁটে পরিবার এই সমস্ত তথ্য পেয়েছে। গত বছরের জুন মাসে এই মেডিকেল কলেজের হস্টেল থেকে এমবিবিএসের এক ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। বারবার এমন ঘটনায় পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যেও ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
মৃতার দাদা শুভ্রদীপ সরকার বলেন, ‘বোনের মৃত্যুর পর ওর মোবাইল ফোন ঘেঁটে ওর ওপর র্যাগিংয়ের বিষয়টি টের পাই। বুঝতে পারি বোন খুব মানসিক চাপে ছিল। সিনিয়ার দিদিরা ওকে র্যাগিং করত। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে নানারকম চাপ দেওয়া হত। বডি শেমিংও করা হয়েছিল। একদিকে পড়াশোনা নিয়ে চাপ ছিল, আরেকদিকে র্যাগিংয়ের শিকার। একারণেই বোন আত্মঘাতী হয়েছে বলে মনে করছি।’ পরিবারের তরফে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বা পুলিশে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পরিবারটি বর্তমানে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে শুভ্রদীপ জানিয়েছেন। কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি ডাঃ রাজীব প্রসাদ বললেন, ‘নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের একজন ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু র্যাগিং সম্পর্কিত কোনও অভিযোগ মেলেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ দোষ করে থাকলে নিশ্চয়ই তার শাস্তি হবে।’
মন্দিরার বাবা বছর দেড়েক আগে মারা যান। মা পেনশনভোগী। কোচবিহারেই বাড়ি হওয়ায় মন্দিরা নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের হস্টেলে থাকতেন না। বাড়িতে থেকেই ক্লাস করে তিনি ওই প্রশিক্ষণ নিতেন। পরিবার সূত্রে খবর, রবিবার দুপুরে বাড়ি ফাঁকা ছিল। মন্দিরা সেই সময় ফিনাইল খেয়ে নেন। পরে তাঁকে কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার সেখানে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। মন্দিরার মৃত্যুতে কালীঘাট রোডে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারে থমথমে পরিবেশ।
গত বছরের ১২ জুন কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল পড়ুয়াদের হস্টেল থেকে স্নিগ্ধা কুণ্ডু (২৪) নামে এমবিবিএসের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা ওই পড়ুয়া এই হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করতেন। মৃত্যুর পর তাঁর বাবা দাবি করেছিলেন, পড়াশোনার চাপ নিতে না পেরেই স্নিগ্ধা আত্মহননের পথ বেছে নেন। ওই ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যে কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নার্সিং ট্রেনিং সেন্টারের এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ফের উদ্বেগ ছড়িয়েছে।