নকশালবাড়ি: অনলাইন টেন্ডার প্রত্যাহার না করায় ঠিকাদারকে প্রকাশ্যে মারধরের অভিযোগ উঠল এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। আক্রান্ত ঠিকাদার দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানান। কিন্তু এখনও ওই নেতার বিরুদ্ধে কোনও পক্ষই ব্যবস্থা না নেওয়ায় আতঙ্কিত আক্রান্ত ঠিকাদার ও তাঁর পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৯ জানুয়ারি নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাবুপাড়ায়। অভিযুক্ত নেতা তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি করেন বাবুপাড়ার বিকাশ ঘোষ। সম্প্রতি নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে হাটের শেড মেরামত ও পার্ক সংস্কার নিয়ে দুটি কাজের জন্য প্রায় ১৩ লক্ষ টাকার অনলাইন টেন্ডার করা হয়েছিল। কাজগুলির বরাত পান বিকাশবাবু। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বকে এড়িয়ে কাজ পাওয়ায় বিকাশবাবুকে টেন্ডার প্রত্যাহারের চাপ দিচ্ছিলেন বাবুপাড়ার বাসিন্দা তৃণমূলের নকশালবাড়ির ব্লক সম্পাদক সমর ঘোষ। তাঁর স্ত্রী বাসন্তী ঘোষ নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত সদস্যা। বিকাশবাবুর অভিযোগ, টেন্ডার প্রত্যাহার না করায় সমরবাবু প্রকাশ্যে তাঁর কলার ধরে মারধর করেন। তাঁর আরও অভিযোগ, পরে নকশালবাড়ি মার্কেট ভবনে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ধাক্কাধাক্কি করে খুনের হুমকিও দিয়েছেন সমরবাবু। ফলে আতঙ্কিত বিকাশবাবু ১৯ জানুয়ারি ঘটনাটি লিখিতভাবে নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানকে জানান। উল্লেখ্য, সমরবাবু নকশালবাড়ি কনট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের সচিব। তিনি বিকাশবাবুর সব অভিযোগ খারিজ করে পালটা চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, ‘মারধরের প্রমাণ দেখাক সে। অনলাইন টেন্ডারে সেও আবেদন করেছে অন্যান্যরাও জমা দিয়েছে। দেখা যাক কে পায়।’
এপ্রসঙ্গে নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, রাজ্য সরকারের নিয়মে ঠিকাদারকে বরাত দেওয়া হয়েছে। কোনও নেতার চাপের কাছে আমরা মাথা নত করব না। পঞ্চায়েতের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দল যা ব্যবস্থা নেবে তাই হবে। তৃণমূলের নকশালবাড়ির ব্লক সভাপতি পৃথ্বীশ রায় জানান, কোনও ঠিকদারকে টেন্ডার প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। বিকাশবাবু সব কিছু জানিয়েছেন। দু’পক্ষকে ডেকে মুখোমুখি বসিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, নকশালবাড়িতে সমরবাবুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নতুন নয়। আগের বাম আমলে তিনি নকশালবাড়ির ঠিকাদার ইউনিয়নের সর্বেসর্বা ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, কাজের বরাত কোন ঠিকাদার পাবে, কার কাছ থেকে কত টাকা আদায় করতে হবে সবই তিনি ঠিক করেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কিন্তু তিনি পিছন দরজা দিয়ে ঠিকাদারি কায়েম করেছেন। রাজ্যে সরকার বদলের পরও নকশালবাড়ির ঠিকাদারদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক তিনিই বলে ঠিকাদারদের একাংশের অভিযোগ। অন্যদের ভাগও তাঁর মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয় বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনের আগে তিনি সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। নতুন দলে যোগ দিয়েই নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে স্ত্রীকে ভোটে জিতিয়ে আনেন। বাম আমলে এই দম্পতি নকশালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের চারবারের সদস্য ছিলেন। তৃণমূল জমানাতেও তাঁর উপর একই দায়িত্ব বর্তেছে বলে ঠিকাদারদের অভিযোগ।