তুষার দেব, দেওয়ানহাট: জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া (Jagadish Chandra Barma Basunia) তৃণমূল কংগ্রেসে (TMC) যোগ দেওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ঘোষই (Rabindranath Ghosh) ছিলেন কার্যত তাঁর ‘গুরু’। কোচবিহারে দলের (Coochbehar TMC) চরম গোষ্ঠীকোন্দলেও বরাবর রবির প্রতি আস্থা রেখেছেন জগদীশ। সেই ‘শিষ্য’ এবারে লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) কোচবিহার আসনের প্রার্থী। তাই এই ভোটযুদ্ধে জগদীশ যদি তৃতীয় পাণ্ডব ‘অর্জুন’ হন তাহলে ‘সারথি’ কৃষ্ণের মতো তাঁর পাশে থাকছেন রবি। প্রচারে জগদীশকে আগলে রাখছেন তিনি।
এটা তাঁর কাছে প্রেস্টিজেরও লড়াই বটে। ইতিমধ্যে রবি ঘোষণা করেছেন, বিজেপি প্রার্থী নিশীথকে না হারিয়ে আমিষ ছোঁবেন না। শেষপর্যন্ত জগদীশকে জিতিয়ে আনতে পারলে জেলা রাজনীতির ‘পুরোনো ঘোড়া’ রবি ফের টগবগিয়ে ছুটবেন তা রাজনীতিতে সদ্য হাতেখড়ি হওয়া কোনও ব্যক্তিও বলে দিতে পারেন।
১৯৯৮ সালে তৃণমূল প্রতিষ্ঠার পর কোচবিহারে দলের জেলা সভাপতি হন রবি। এরপর প্রায় ২১ বছর জেলায় তৃণমূলের শেষকথা ছিলেন তিনি। নাটাবাড়ি কেন্দ্র থেকে উঠে এসেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রক সহ বহু গুরুদায়িত্ব সামলেছেন তিনি। কিন্তু ২০১৯ লোকসভা ভোটে কোচবিহার কেন্দ্র হাতছাড়া হতে তিনি জেলা সভাপতি পদ হারান। এরপর ২০২১ বিধানসভা ভোটে নাটাবাড়ি কেন্দ্রে পরাজয়ের পর তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার কার্যত প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়ায়।
তড়িঘড়ি কোচবিহার শহরের ভোটার তালিকায় নাম তুলে পুরভোটে লড়েন রবি। ভোটে জিতে চেয়ারম্যান হিসেবে ‘কামব্যাক’ তাঁর। ক্ষমতা হ্রাসের এই পর্বে জেলায় বেশিরভাগ নেতার সঙ্গেই তাঁর বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু রবি-জগদীশের মধ্যে সামান্য মতান্তরের কথাও কেউ বলতে পারেন না। তাই জগদীশকে এবারে লোকসভায় প্রার্থী করতে প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিলেন রবি।
গত ১০ মার্চ ব্রিগেডে তৃণমূলের প্রার্থীতালিকায় কোচবিহার আসনের জন্য চূড়ান্ত হয় জগদীশের নাম। এরপর থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রচার কর্মসূচিতে জগদীশের সঙ্গেই থাকছেন রবি। দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে মন্দির মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন। একের পর এক সভায় বক্তব্য রাখছেন। বয়স আর শারীরিক সমস্যাকে যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। দলে প্রিয়পাত্র প্রার্থী হওয়াতেই কি এতটা সক্রিয়তা? এই প্রশ্নে রবির সাফ জবাব, ‘তা নয়। তবে জগদীশ ২০১১ সাল থেকে এপর্যন্ত সিতাইয়ে দলের শক্তি অটুট রেখেছে। চারদিকে খারাপ ফলের মধ্যেও ও আমাদের নিরাশ করেনি। তাই এমন একজনকে জিতিয়ে সংসদে পাঠানো আমাদের সকলের কর্তব্য।’ আর জেলার সমস্ত নেতা-কর্মীই জগদীশের লড়াইকে ভালোবাসে, সম্মান করে বলে তাঁর সংযোজন।
এদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা প্রতিদ্বন্দ্বী নিশীথ প্রামাণিককে হারিয়ে জয়মাল্য গলায় তুলতে জগদীশও রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সহ দলীয় নেতৃত্বের বিভিন্ন পরামর্শ মেনে চলছেন। লোকসভা নির্বাচনের ‘কুরুক্ষেত্রে’ ‘অর্জুন’ জগদীশকে জয়ের স্বাদ এনে দিতে পারবেন কি না ‘সারথি’ রবি, সেই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আগামী ৪ জুন অবধি অপেক্ষা করতে হবে জেলাবাসীকে।