ইসলামপুর: এবার লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জে আলি ইমরান রমজ ওরফে ভিক্টর যেন তৃণমূল শিবিরের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব রায়গঞ্জে দলীয় প্রার্থীর নাম প্রকাশ না করলেও জেলা সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছেন, ভিক্টরই প্রার্থী হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রায়গঞ্জে তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি রায়গঞ্জ আসনে ভিক্টরকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে।’ তাঁর এই মন্তব্যের পরই রক্তচাপ বেড়েছে তৃণমূল নেতাদের।
গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, ইসলামপুর এবং করণদিঘি বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকে থাবা বসাতে ভিক্টর যে মরিয়া চেষ্টা চালাবেন তা নিয়ে শাসকদলের কোনও সন্দেহ নেই। এদিকে, গত লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে থাকা সিপিএম প্রয়োজনে তঁাকে সমর্থন করতে পারে বলে জানাতেই জেতার ক্ষেত্রে অঙ্ক কষতে শুরু করেছে ঘাসফুল শিবির। তবে, মুখে ভিক্টরকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। রায়গঞ্জ আসনে তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণী অবশ্য বলছেন, ‘ভিক্টর কোনও ফ্যাক্টরই না। ভিক্টর বিজেপির দালাল। গতবার এভাবে জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে হারিয়েছিল।’
ইসলামপুরের বাইপাস আন্দোলনে কৃষকদের লড়াইয়ে ভিক্টরের যোগদান থেকে শুরু করে ইসলামপুরকে আলাদা জেলা করার দাবিতে দলের বিরুদ্ধে গিয়েও তাঁর সরব হওয়ার দৃষ্টান্ত ভিক্টরকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মহলে অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। গত লোকসভা ভোটে ওই আসনে ৮৩ হাজার ৬৬২ ভোট পেয়ে কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি চতুর্থ স্থানে ছিলেন। সেই দিক দিয়ে বিচার করলে বিজেপি এবং তৃণমূলকে কংগ্রেস যে কড়া টক্কর দেবে তেমনটা এখনই মানতে নারাজ সাধারণ ভোটাররা।
কিন্তু ভূমিপুত্র এবং সংখ্যালঘু মুখ হওয়ায় বর্তমান মেরুকরণের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন ভিক্টর। গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, করণদিঘি এবং ইসলামপুরের বড় অংশে ভিক্টরের রাজনৈতিক সক্রিয়তা রয়েছে।
ভিক্টর বলছেন, ‘শুধু সংখ্যালঘু নয়, জেলার সমস্ত স্তরের মানুষের পাশে আমি থাকি। আমি সকলের কাছে ভোট যেমন চাইব, তেমনি ভোটের খরচের জন্য অর্থসাহায্যও চাইব। আমাকে নিয়ে তৃণমূল প্রার্থীর বয়ানেই হতাশা প্রকট হয়ে উঠেছে।’
অন্যদিকে, কানাইয়ালালকে তৃণমূল প্রার্থী না করায় শাসকদলে অন্তর্ঘাত নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। কানাইয়া কৃষ্ণের হয়ে প্রচারে নামলেও ভোটবাক্সে তার কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়ে সন্দেহ খোদ তৃণমূলের নেতাদেরই। আর তাই ভিক্টর ঘাসফুল শিবিরের ওই কাজিয়াকে কাজে লাগিয়ে প্রচারের ছক কষছেন।
গত লোকসভা ভোটে বামফ্রন্ট প্রার্থী সিপিএমের মহম্মদ সেলিম এক লক্ষ ৮২ হাজার ৩৫টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন। ফলে ভিক্টর সিপিএমের সমর্থন পেলে যে সমস্যা হবে তা তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতারাও মেনে নিচ্ছেন। সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটির সদস্য বিকাশ দাস বলেন, ‘শীর্ষ নেতৃত্ব প্রার্থী না দিলে আমরা বিজেপি-তৃণমূলকে হারাতে ভিক্টরকেই সমর্থন করব।’