প্রণব সূত্রধর, আলিপুরদুয়ার, ৬ এপ্রিল: শুক্রবার সকাল নয়টা। রোজকার মতো স্কুলে যাওয়ার হুড়োহুড়ি। হঠাৎ সেই শিক্ষকের মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে একটি বারো সংখ্যার নম্বর। ফোন তুলতেই অনায়াসেই শিক্ষকের আধার কার্ড নম্বর ও নাম বলে দেয় ফোনের ওপারে থাকা এক অপরিচিত কণ্ঠ। এতে আশ্চর্য হয়ে যান শিক্ষক। তারপরেই মুম্বইয়ের আন্ধেরি থানায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক বিষয়ে মামলা হয়েছে বলে জানানো হয়। মামলার কথা শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন শিক্ষক। পরবর্তীতে সেই টেলিকম সংস্থার তরফে বলা হয়, এক ‘পুলিশ অফিসার’-এর সঙ্গে কথা বলতে হবে শিক্ষককে।
দ্বিতীয়জন আবার পুলিশ পরিচয়ে ফোন করে। একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। শিক্ষক যথাযথ সব পালনও করেন। কিন্তু এই অ্যাপ ডাউনলোড করতেই পুলিশের পোশাকে এক ব্যক্তিকে দেখা গেলেও তার মুখ দেখা যায়নি। শিক্ষকের মনে প্রশ্ন জাগার আগেই সেই ব্যক্তি বলে ওঠেন, আর্থিক প্রতারণা হয়েছে। যে নম্বর থেকে এই প্রতারণা হয়েছে, সেই নম্বরটি নাকি শিক্ষকের নামে রেজিস্টার করা।
এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নামে তৃতীয় জনের কাছে ফোন দেওয়া হয়। তিনি আরও একাধিক অভিযোগ করেন। একটি বড় বিমান সংস্থার কর্ণধার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন অভিযোগও নাকি ছিল শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এসব শুনে স্কুলে যাওয়ার কথা তো দূর, হতভম্ব হয়ে মাথায় হাত পড়ে যায় ওই শিক্ষকের। তৃতীয়জন অবশ্য স্বীকার করেন এসবের অভিযোগ ভুয়ো।
তারপর সিবিআই অফিসার পরিচয়ে এক মহিলা ফোনে বলেন গ্রেপ্তারির কথা। বিশ্বাস জাগাতে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার কাগজ দেখানো হয়। টাকার লেনদেন যাচাই করতে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয় শিক্ষকের কাছ থেকে। সবকিছু মিটমাটের জন্য পঞ্চাশ লাখ টাকাও চান সেই ‘অফিসার।’ টাকা পাঠালে সুপ্রিম কোর্টের অডিট অফিসার নাকি টাকার সিরিয়াল নম্বর দেখবেন। এই কথা শোনার পরই টনক নড়ে শিক্ষকের। অনলাইনে টাকা দিলে টাকার সিরিয়াল নম্বর দেখা যাবে কীভাবে? তখনই ঘোর কাটে তঁার।
ওই শিক্ষক বলেন, ‘শেষপর্যন্ত আমাকে এক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তারির হুমকি দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়, পরে সাইবার ক্রাইম থানা ও আলিপুরদুয়ার থানায় বিষয়টি জানাই।’ শুক্রবার সকাল থেকে চার ঘণ্টা এই ‘নাটক’ চলে ফোনের ওপার থেকে। সেদিনই শিক্ষক আলিপুরদুয়ার থানার সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ জানান। সেখানে সাইবার ক্রাইমের অনলাইন পোর্টালে অভিযোগ রেজিস্টার করা হয় সমস্ত তথ্য সহ। শনিবার ফের আলিপুরদুয়ার থানায় যান তিনি। আলিপুরদুয়ার থানা আইসি অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘এরকম অভিযোগ মাঝেমধ্যেই আসে। বিষয়টি দেখছি।’