ভাস্কর বাগচী, দার্জিলিং: পাহাড়ের রাজনীতিটা বরাবরই একটু অন্যরকম। ভোট এলেও পাহাড়বাসী ‘জেগে ওঠেন’ একটু দেরিতে। কিন্তু তা বলে ভোটের (Lok Sabha Election 2024) দু’দিন আগেও উচ্ছ্বাস থাকবে না, এমনটাও সম্ভব!
কার্সিয়াং (Kurseong) পেরিয়ে সোনাদা (Sonada), ঘুম হয়ে দার্জিলিং (Darjeeling)- কোথাও ভোটের লেশমাত্র নেই। সেভাবে চোখে পড়ে না রাজনৈতিক দলগুলির ঝান্ডা, ফ্লেক্সও। কিন্তু নজর কাড়ে একটু পরপর গেরুয়া ধ্বজা। রামের আবেগ যে পাহাড়েও কতটা প্রকট, তা ঠাহর করা যায় নিমেষে।
সাধারণ দোকানদার থেকে চা বিক্রেতা কিংবা হোটেল ব্যবসায়ী থেকে ফুটপাথের বিক্রেতা, এবারের লোকসভা ভোট নিয়ে কারও কোনও মাথাব্যথাই নেই। যে যার নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত দিনভর। দার্জিলিংয়ের ম্যালে ফুটপাথে বসে ব্যবসা করেন কমলা তামাং। ভোট নিয়ে উচ্ছ্বাস নেই কেন? কমলার জবাব, ‘দাদা, পেটের ভাত তো জোগাড় করতে হবে। মিটিং-মিছিলে গেলে আমাদের চলবে না। এখন পাহাড়ে প্রচুর পর্যটক রয়েছেন। তারা কেনাকাটা করছেন। তাই আমাদের নজর এখন ব্যবসাতেই।’
দার্জিলিং শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার নীচে সমতলে নামলেই কিন্তু দেখা যাবে ভিন্ন চিত্র। এখানে ভোট মানে রীতিমতো উৎসব। লাল, নীল, গেরুয়া পতাকা দিয়ে যেন গোটা শিলিগুড়ি শহর ও গ্রামাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাকে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। পাড়ার মোড়ই হোক কিংবা চায়ের দোকান, আলোচনার একটাই বিষয়, ‘ভোট’।
রাজনৈতিক নেতা তো বটেই, পাহাড়ের রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদেরও পাহাড়ের মানুষের পালস বুঝতে রীতিমতো নাজেহাল অবস্থা। বড় জনসভাই হোক কিংবা ছোটখাটো মিটিং লোক আসছেন বটে, কিন্তু সেভাবে উৎসাহ নেই। কেন এমন হাল? সত্তরোর্ধ্ব এক প্রবীণের কথায়, ‘আগে ভোট হত গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে কেন্দ্র করে। ফলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটে অংশ নিতেন, প্রচারে বের হতেন। এখন মানুষ বুঝে গিয়েছেন গোর্খাল্যান্ডের শুধু স্বপ্ন দেখিয়ে যাবে রাজনৈতিক দলগুলো। তাই আর কেউ সময় নষ্ট করেন না।’
দার্জিলিং শহর থেকে সমতলে নামার পথে ঘুম, সোনাদার রাস্তার দুই ধারে গার্ডওয়ালে বেশ কিছু জায়গায় নজরে এল কংগ্রেস প্রার্থী মুনীশ তামাং ও হামরো পার্টির নেতা অজয় এডওয়ার্ডের ছবি দেওয়া পোস্টার। সোনাদার এক ফল ব্যবসায়ী অজয় গুরুংয়ের সঙ্গে আলাপ জমানোর পর বললেন, ‘আমাদের এখানে ভোট নিয়ে মানুষের অত হইচই কোনও সময়ই থাকে না। আমরা ভোট দিতে যাব। ব্যাস, ওইটুকুই।’
সোনাদা স্টেশন থেকে একটু এগিয়ে কার্সিয়াংয়ের কাছাকাছি যেতেই রাস্তার বাঁ ধারে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরাট হোর্ডিং। সেখানে কয়েকটি জায়গায় দেখা গেল তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী গোপাল লামা ও অনীত থাপার ছবি দেওয়া বেশ কিছু পোস্টার। রাস্তার ধারেও এই ধরনের কিছু পোস্টার সাঁটানো।
কার্সিয়াং বাজারে কাছে হাতেগোনা ১০-১২টি বিজেপির পোস্টার চোখে পড়েছে। কিন্তু আর নেই। কার্সিয়াংয়ের এক হোটেলে কথা হল দীপক ছেত্রীর সঙ্গে। দীপক ওই এলাকায় ছোট একটি হোটেল চালান। তাঁর কথায়, ‘আসলে পর্যটকরা আমাদের কাছে ভগবান। তাঁদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেটা আমরা পাহাড়বাসীরা সবসময় দেখার চেষ্টা করি।’
রোহিণীর রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে সমতলে আঙিনায় ঢুকতেই চোখ ধাঁধিয়ে যায় পতাকা, ফেস্টুনে। পাহাড় কি তবে অন্য জগতে, প্রশ্ন উঁকি দেয় মনে।