মহম্মদ হাসিম, নকশালবাড়ি: একসময় কৃষক আন্দোলনের জন্য বিখ্যাত নকশালবাড়ি (Naxalbari) বর্তমানে মাদক পাচারের (Drug Trafficking) অন্যতম ঘাঁটি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একসময় চোরাচালান হলেও এখন তা অতীত। ওই কারবার থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তবে ব্রাউন সুগারের মতো মাদককে ঘিরেই এখন নকশালবাড়ি ও খড়িবাড়ির (Kharibari) মূল কারবার। এর জেরে তোতারামজোতের বাসিন্দা দিনমজুর মহম্মদ সাহিরের মতো অনেকেই গভীর উদ্বেগে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কড়া পদক্ষেপ না করা হলে প্রচণ্ড সমস্যা হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। দার্জিলিং জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে গত তিন বছরে নকশালবাড়ি ও খড়িবাড়ি মিলিয়ে ১৫০টিরও বেশি মামলা দায়ের হয়েছে। ৭০ জনের বেশি ধরা পড়েছে। তবে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ওই কারবারিদের অনেকেই ছাড়া পেয়ে নকশালবাড়ি, খড়িবাড়িজুড়ে রমরমিয়ে একই কারবার চালাচ্ছে।
শিলিগুড়ি (Siliguri) মহকুমার দুই ব্লক নকশালবাড়ি ও খড়িবাড়ি নেপাল সীমান্তে পড়েছে। মেচি নদী পেরিয়ে বিদেশি পণ্য, গোরু, সুপারিকে কেন্দ্র করে এখানে বহুদিন ধরে চোরাকারবার চলেছে। এলাকার জনসংখ্যা বেড়ে ছয় লক্ষ হয়েছে৷ একটা সময় বামফ্রন্টের শক্ত জমিতে এখন তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি দাপট৷ পুরুষ ও মহিলাদের অনেকেই আজকাল টোটো চালিয়ে সংসার চালান। বুলা রায় তিন বছর ধরে টোটো চালিয়ে চারজনের সংসার চালাচ্ছেন। তিনি বললেন, ‘আগে নেপালে জিনিসপত্র আনতে গেলে পুলিশ ও এসএসবির ভয়ে আতঙ্কে থাকতাম। এখন টোটো চালিয়ে যা রোজগার করি তাতে শান্তিতে দিন কাটাই।’
তবে চোরাচালান বন্ধ হওয়ায় বর্তমানে এখানে মাদকের কারবারের অনেকটাই বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে মাদকের কারবারিরা এলাকার কিশোর, তরুণ ও মহিলাদের এই কাজে যুক্ত করেছে। নতুন প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ে সীমান্তে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই পাচারের কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছে। আর এর জেরেই বিপদ বাড়ছে। পানিট্যাঙ্কির বাসিন্দা রাহুল সিংহ বললেন, ‘নেশার টাকা জোগাড় করার জন্য অনেকেই বিপথে পরিচালিত হচ্ছে।’ নকশালবাড়ি কোটিয়াজোতের বাসিন্দা মনোরঞ্জন সিংহও একই কথা জানিয়েছেন। নকশালবাড়ি ও খড়িবাড়ির সীমান্ত এলাকায় মাদকের কারবার বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ ও এসএসবির ওপর বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ। যেভাবে এলাকায় মাদকের কারবার বেড়ে চলেছে তাতে বাসিন্দারা রীতিমতো উদ্বেগে পড়েছেন। শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামাল না দিলে এলাকার আর্থসামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। এমনকি পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ না করা হলে বাসিন্দাদের একাংশ তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।