রণজিৎ ঘোষ, দার্জিলিং: ম্যাল (Darjeeling Mall) -নামটা শুনলেই মনে আনন্দ অনুভূত হয়। দার্জিলিং (Darjeeling) বেড়াতে গেলে ম্যালে ঢুঁ মারাটা যেন একরকম বাধ্যতামূলক। কিন্তু তারপরও ভালো নেই ম্যালের ব্যবসায়ীরা। তা সে চা বিক্রেতাই হোন বা ফোটোগ্রাফার কিংবা পোশাক বিক্রেতা। সকলেরই ব্যবসায় মন্দা এসে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন। অনেকেই পেশা বদল করে ভিনরাজ্যে বা বিদেশে চলে গিয়েছেন।
ম্যালে একটা সময় ছবি তোলার জন্য পর্যটকদের (Tourists) লাইন পড়ত। ছবি তুলে ৩০ মিনিটের মধ্যে সেই ছবি প্রিন্ট করে পর্যটকের হাতে দিয়ে দিতেন ফোটোগ্রাফাররা। ‘হাতে গরম’ ছবি পেয়ে বেজায় খুশি হতেন পর্যটকরাও। এখন মাত্র পাঁচ মিনিটেই ছবি দিচ্ছেন েফাটোগ্রাফাররা। তবুও আগ্রহ নেই পর্যটকদের। সবার হাতে স্মার্টফোন। কেউ আবার নিজস্ব ক্যামেরাও নিয়ে আসছেন। ফলে তাঁদের ব্যবসা তলানিতে, জানালেন স্মরণ তামাং, বিকাশ ছেত্রী, পূরণ প্রধানরা। স্মরণ বলছেন, ‘আগে এখানে ৫৬ জন ফোটোগ্রাফার ছিলেন। এখন আমরা চারজন রয়েছি। বাকিরা কাজের সন্ধানে দিল্লি, মুম্বই অথবা বিদেশে চলে গিয়েছেন। আমাদের এখন দিনে ৫০০ টাকাও রোজগার হয় না।’ বাধ্য হয়ে তাঁরা বাচ্চাদের জন্য খেলনা গাড়ির ব্যবসা শুরু করেছেন। ওই গাড়িতে ১০০ টাকায় একবার ম্যালের চারপাশে ঘোরানো হয়। তাতে কিছু আয় হচ্ছে। এখানেই তিনজন পাহাড়ি পোশাক ভাড়া দিয়ে রোজগার করতেন। পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অনেকেই দার্জিলিংয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ছবি তুলতে পছন্দ করতেন। কিন্তু এখন তো আর ছবি তোলার চলই নেই, কাজেই পোশাক ভাড়া হয় না। এমনটাই বক্তব্য ব্যবসায়ী সুমিতা ছেত্রী, নমন রাইদের।
চৌরাস্তায় একাধিক কাফেটারিয়া তৈরি হওয়ায় ম্যালের চা বিক্রেতাদের অবস্থাটাও তথৈবচ। ৩০ বছর ধরে ম্যালে চা বিক্রি করে সংসার চলে অশোক গিরির। এক টাকায় ব্যবসা শুরু করে এখন এক কাপ চায়ের দাম ১৫ টাকা। কিন্তু তার পরেও মুখে হাসি নেই তাঁর। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ কাপ চা বিক্রি হত, এখন সেটা ৫০-৬০ কাপে দাঁড়িয়েছে। পিকে জৈন নামে অপর এক চা বিক্রেতা বললেন, ‘চারপাশে এত ক্যাফে হয়ে গিয়েছে যে পর্যটকরা সেখানেই দু’পয়সা বেশি খরচ করে চা পান করছেন। আমাদের ব্যবসা শেষ।’
ম্যালের ঘোড়ার ব্যবসায়ীদের অবস্থাও করুণ। এখন পর্যটকরা ম্যালে এসে আর আগের মতো ঘোড়ায় চড়ছেন না। ফলে ব্যবসা কমেছে, দাবি করলেন ঘোড়ার মালিক বিকাশ ছেত্রী।