প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: গত সপ্তাহে লোকসভায় ধ্বনিভোটে পাশ হয়েছে বিতর্কিত দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল। বিরোধী শিবিরের প্রবল বিরোধিতার মাঝেই সোমবার রাজ্যসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে পাশ হয়ে গেল দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল। স্বয়ংক্রিয় ভোটিং মেশিন খারাপ থাকায় ভোটিং স্লিপে মত দেন রাজ্যসভা সাংসদরা। এই বিলের পক্ষে মতদান করেছেন ১৩১ জন, বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেন ১০২ জন।
সোমবার রাতে সংসদের উচ্চকক্ষে ভোটাভুটির মাধ্যমে বিলটি পাস হওয়ার পরে বিলটির আইনে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকল না। প্রথামাফিক এবার বিলটিকে পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর স্বাক্ষরের জন্য৷ তিনি স্বাক্ষর করার পরেই দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলটি আইনে রূপান্তরিত হবে। এর পরের ধাপে তৈরি করা হবে বিধি। তারপরেই কার্যকর হবে নতুন আইন, যেখানে দিল্লি সরকারের অধীনে কর্মরত আইএএস আধিকারিকদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নির্বাচিত হয়ে আসা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ সরকারের হাত থেকে চলে যাবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।
সংসদের উচ্চকক্ষে দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলটিকে প্রতিহত করার উদ্দেশে মরিয়া হয়ে উঠেছিল বিরোধী শিবির। এই মর্মে বিরোধী শিবিরের তরফে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি, বাম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, ডিএমকে সাংসদ তিরুচি শিবা, আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝাঁ, আপ সাংসদ রাঘব চাড্ডা, তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের মতো সাংসদরা প্রত্যেকেই বিলটিকে অসাংবিধানিক, যুক্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বিরুদ্ধ বলে দাবি করেন।
এই মর্মেই সাংসদদের প্রত্যেককে সতর্ক করেন দুঁদে আইনজীবী তথা কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি। দিল্লির পরে দেশের অন্য বিরোধী শাসিত রাজ্যের জন্যও একই নীতি গ্রহণ করা হতে পারে, যেখানে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির অধীনে কর্মরত উচ্চপদস্থ আমলাদের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নেবে কেন্দ্রীয় সরকার, এমন অভিযোগ করে সিংভির দাবি, ‘সব কা নম্বর আয়েগা।’
মোদি সরকারের তরফে বিলটিকে সমর্থন করেন মনোনীত সাংসদ তথা দেশের শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। রঞ্জন গগৈর যুক্তি, ‘সংসদের ক্ষমতা সর্বোচ্চ। এই আইনকে বেআইনি আখ্যা দেওয়া যায় না, কারণ এই বিল দেশের সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী নয় এবং তা কোনওভাবেই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর বিরুদ্ধাচারণ করে না। আমার মনে হয় এই আইন স্বেচ্ছাচারী নয়, সংবিধানের ভিত্তিতেও আঘাত করে না। যদি আপনাদের মনে হয় আইনি বিরোধ হচ্ছে তাহলে আপনারা সংবিধান সংশোধন করে দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দিন।’
‘মিটু’ কাণ্ডে অভিযুক্ত রঞ্জন গগৈর বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হয়ে এদিন রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করেন জয়া বচ্চন, প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী, সুস্মিতা দেব, বন্দনা চহ্বান, ফৌজিয়া খান সহ একাধিক মহিলা সাংসদ। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শা মন্তব্য করেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থের জন্যই দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলের বিরোধিতা করা হচ্ছে।’