প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: রাজ্যসভায় দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল নিয়ে আলোচনা চলাকালীন সোমবার আবারও উত্তপ্ত বাকবিতন্ডায় জড়ালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকর। এর আগেও একাধিকবার বাদানুবাদে জড়িয়েছেন ডেরেক এবং ধনকর। এদিন ডেরেককে ‘ড্রামাবাজ’ বলে কটাক্ষও করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান।
এদিন দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল নিয়ে রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখার সময় কেন্দ্রীয় নীতি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতিপঙ্গুতা নিয়ে মোদি সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণ করা দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন নরেন্দ্র মোদি৷ তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেই অর্থে তিনি ‘চাইল্ড অফ ফেডারেলিজম (মৈত্রীতন্ত্রের সন্তান)’৷ তারপরেও কেন তিনি দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলের মাধ্যমে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ধ্বংস করতে চাইছেন?” এই মর্মেই মনরেগা সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার বঞ্চনা ও বিপুল পরিমাণ বকেয়া টাকার উল্লেখ করে ডেরেকের দাবি, “বকেয়া টাকার দাবিতে আমাদের সুদীর্ঘ আন্দোলন চলছে। মনরেগা নিয়ে কোটি কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ২ অক্টোবর দিল্লিতে ১২০০০ কোটি টাকা বকেয়া প্রদানের দাবিতে আমরা বিরাট ধর্না দেব। একইসঙ্গে আমরা দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিলের বিরোধিতা করব।”
এর পরেই ডেরেক মোদি সরকারকে নিশানা করে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনেন। তাঁর কথায়, “বিরোধী রাজ্যে একটা ইঁদুর, বেড়াল পথ কাটলে ঘনঘন প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়। কেন বিরোধী রাজ্যে এতবার কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়? কেন সব থেকে বেশি খুন হওয়া রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, কেন সব থেকে বেশি মহিলা অত্যাচারের পরিসংখ্যান সংবলিত অসম বা জাতিদাঙ্গা উপদ্রুত মণিপুরে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয় না?”
ডেরেকের সংযোজন, “মোদি সরকারে তিনজন মন্ত্রী, পিএম (প্রধানমন্ত্রী), এইচএম (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী) এবং ডব্লু এম (ওয়াশিং মেশিন)৷ কেন্দ্র পরিচালিত এই অদৃশ্য ওয়াশিং মেশিনে সব পাপ, দুর্নীতি ইত্যাদি ধুয়ে ফেলা হয় সরকারের নির্দেশে।”
তাঁর এই মন্তব্যের পরেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয় ট্রেজারি বেঞ্চ। পাল্টা ট্রেজারি বেঞ্চকে নিশানা করে মন্তব্য করেন ডেরেক। রাজ্যসভায় উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকর সঙ্গে সঙ্গেই হস্তক্ষেপ করেন। ডেরেককে সতর্ক করে ধনকর বলেন, “আবার আপনাকে সতর্ক করছি। আপনার বিরুদ্ধে পেশ করা স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব এখনও বিবেচনাধীন। আমি আপনাকে এই ধরণের ড্রামাবাজি করতে দেব না। আপনি ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য এমন আচরণ করছেন।”
ধনকরের মন্তব্যের পাল্টা দিয়ে ডেরেক দাবি করেন, “আমি কোনও ড্রামাবাজি করছি না। মহারাষ্ট্রে যা হয়েছে সেটাই ড্রামাবাজি৷” এর পর রীতিমতো রাগতস্বরে ধনকরকে বলতে শোনা যায়, ডেরেক বিরত না হলে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই কড়া পদক্ষেপ না নিয়ে ডেরেকের মাইক বন্ধ করে অন্য সাংসদকে বলার সুযোগ করে দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান।