নয়াদিল্লি: আজ ২১ জুন, আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করল গোটা বিশ্ব। যোগ দিবসের চোখ ধাঁধানো ক্যারিশ্মায় অনেকেই ভুলে গেছেন আজ বিশ্ব সংগীত দিবসও। যোগ দিবসের বহু আগে থেকে আজকের এই দিনটি সাড়ম্বরে পালন করে থাকেন বিশ্বের অগণিত সংগীতপ্রেমী মানুষ৷ যোগ দিবসের জৌলুষে সংগীত দিবসে খানিকটা হলেও ভাঁটা পড়লেও, বুধবার তা সর্বান্তকরণে জিইয়ে রাখলেন অনিল সামোটা, ব্রিজভূষণ ত্যাগি, রজত রাঠোররা। এঁরা কেউই পেশাদার গায়ক বা সংগীতশিল্পী নন, তাঁরা কর্তব্যপরায়ণ শান্তিরক্ষক, দিল্লি পুলিশের আধিকারিক; যারা তাঁদের সাঙ্গীতিক গুণাবলীতে ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছেন আপামর দেশবাসীর৷ সংগীত দিবসে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার পাশাপাশি সংগীতকেও দিলেন বিশেষ স্থান। দিল্লি পুলিশের এই আধিকারিকদের গাওয়া গান ইতিমধ্যেই ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে, যা নিয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁরাও৷
দিল্লি পুলিশের মুখ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই তিন গানপাগল উর্দিধারীর কথা। এসিপি কনট প্লেস অনিল সামোটা ১৯৮৯ সালে পুলিশ ফোর্সে যুক্ত হন। চোর-ডাকাত-ছিনতাইবাজদের ধরার অবসরে গানই তাঁর জীবনের একমাত্র আশ্রয়৷ নিজে সুকণ্ঠের অধিকারী সামোটা জানিয়েছেন তিনি শুধু গায়কই নন, কবিও। ছোটবেলা থেকে লিখছেন কবিতা। নিজের লেখাতে দিয়েছেন সুরও। হিন্দি সাহিত্য এবং সংগীতের অনুরাগী অনিল সামোটা তাঁর সংস্কৃতি মনস্কতার জন্য বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে সাহিত্য নিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। ইচ্ছা ছিল প্লেব্যাক গায়ক হবেন, কিন্তু বাবার ইচ্ছাপূরণে দিল্লি পুলিশে যোগ দেন। পুলিশে যোগ দিলেও এক মুহূর্ত সংগীত ছাড়া থাকতে পারেন না তিনি। পুরাতন দিল্লির সদর বাজার পুলিশ স্টেশনে পোস্টেড থাকাকালীন অঞ্চলের লোক স্টেশনে ভিড় জমাতো তাঁর গান শুনতে। ইউটিউবে তাঁর গানের ভক্তের সংখ্যা কম নয়। তিনি বলেছেন, ‘চোর-ডাকাত ছাড়া থাকতে পারব, গান ছাড়া একমুহূর্তও কাটাতে পারব না।’
একইসুর শোনা গেছে দিল্লি পুলিশের জগৎপুরী থানার সাব-ইনস্পেক্টর ব্রিজভূষণ ত্যাগির কণ্ঠে। ১৯৮২ সালে দিল্লি পুলিশে যোগ দেওয়া বর্ষীয়ান এই পুলিশ কর্তা স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে চেয়েছিলেন দিল্লি ছেড়ে মুম্বই পাড়ি দিতে, প্লে ব্যাক সিঙ্গার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু বিধি বাম, কপালের ফেরে পুলিশ ফোর্সে যোগ দিতে হয় ব্রিজভূষণ ত্যাগিকে। সুকণ্ঠের অধিকারী এই পুলিশ অফিসার তাঁর শাস্ত্রীয় গায়কীর জন্য সুপ্রসিদ্ধ৷ মুকেশ, রফি, কিশোর কুমার ও মান্না দে’র অন্ধভক্ত ত্যাগী নিজে চলমান সাঙ্গীতিক এনসাইক্লোপিডিয়া৷ যে কোনও সিনেমা বা তার গান এমনকি গায়ক-সুরকারের হালহদিশও তাঁর নখদর্পনে৷ কর্তব্যপালনের ফাঁকে আজও তিনি অনায়াসে গলা ছেড়ে ধরেন গান, তাঁর ভাষায় যা তাঁর ‘প্রথম ভালোবাসা’। গানপাগল পুলিশদের ভিড়ে রীতিমতো সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন দিল্লি পুলিশের ফোর্থ ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল রজত রাঠোর। অক্ষয় কুমারের ‘কেশরী’র বিখ্যাত সেই গান ‘তেরি মিট্টি’ গেয়ে ও করোনা আক্রান্তদের উৎসর্গ করে নেটমাধ্যমে আলোড়ন ফেলে দিয়ে ছিলেন বছর ৩২ এর রজত৷ পূর্বদিল্লির বাসিন্দা, গরিব ঘরের ছেলে রজত কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করে পুলিশে যোগ দেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই গান তাঁর রক্তে। নেননি প্রথাগত তালিম অথচ গীটার হাতে গান গাইতে উঠলে তাঁর সুর লাগানো দেখে তাক খেয়ে যান বাঘা বাঘা সব শিল্পীরা। ব্যাটেলিয়নের ডিউটি পালন করবার পাশাপাশি গানই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। বুধবার, বিশ্ব সংগীত দিবসের দিনে দিল্লি পুলিশের এই তিন কৃতী অফিসার থুড়ি সংগীতশিল্পী একত্রে একটি গান রেকর্ড করে নেটমাধ্যমে ছাড়লে তা প্রবল ভাইরাল হয়৷ সংগীত দিবসে মা সরস্বতীর প্রতি এই গানই তাঁদের পরম শ্রদ্ধার্ঘ্য, বলে জানিয়েছেন অনিল সামোটা, ব্রিজভূষণ ত্যাগি, এবং রজত রাঠোর। শান্তিরক্ষকদের সুরেলা সফরে উচ্ছ্বাস ও প্রশংসা করেছেন রাজধানী দিল্লির অগণিত সংগীতপ্রেমিরা।