প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটিকে কলকাতায় আসতে আমন্ত্রণ জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। মঙ্গলবার মার্কিন রাষ্ট্রদূতের করা বিশেষ টুইটের প্রত্যুত্তরে তৃণমূল সাংসদ তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার গারসেটি তাঁর অফিসিয়াল টুইটার হ্যাণ্ডেল থেকে সাম্প্রতিক ‘বঙ্গভবন’ সফর নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। বঙ্গভবনের লাউঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সত্যজিৎ রায়ের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘বঙ্গভবন থেকে নমস্কার। বাংলার সুমহান ঐতিহ্য বিশ্বজনীন, সুপ্রসিদ্ধ। এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী ও অস্কারবিজয়ী দুই মহান ব্যক্তিত্বের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সেই ঐতিহ্য অনুভব করতে পারছি।’ গারসেটি এও বলেন, ‘বিশ্বের দরবারে বাংলা এবং বাঙালিদের স্থান বিশেষ সম্মানের। বাঙালি খাবার, সংস্কৃতি, ফুটবল এবং জীবনযাপন আমাকে বিশেষ আকৃষ্ট করে। আজ দিল্লির বঙ্গভবনে আসতে পেরে আমি আনন্দিত, গর্বিত।’
ভিডিও শেষে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘শীঘ্রই দেখা হবে কলকাতায়’। এই টুইট বার্তার জবাবে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন শুদ্ধ বাংলায় লেখেন, ‘আপনি বাংলায় আসুন, কলকাতায় আসুন। স্বাগতম।’ এদিন ডেরেক তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, ‘বাঙালিরা শুধু সংস্কৃতিমনস্ক নয়, তাঁরা অত্যন্ত অতিথিবৎসল এবং খাদ্যরসিকও। তার নমুনা ইতিমধ্যে দিল্লির বঙ্গভবনে পেয়েছেন গারসেটি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং অতিথি আপ্যায়ণে সুবিখ্যাত। মার্কিন রাষ্ট্রদূত কলকাতায় আসলে তাঁর আতিথেয়তায় কোনও ত্রুটি থাকবে না।’
গত সপ্তাহে আচমকাই সদলবলে দিল্লির হেইলি রোডের বঙ্গভবনে হাজির হয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি। এই প্রথমবার তিনি দিল্লিতে স্থিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অতিথিশালায় আসেন। তাঁর আসার কথা শুনতে পেয়ে সাজ সাজ রব ওঠে বঙ্গভবনে। তড়িঘড়ি সাজিয়ে তোলা হয় রাজ্য সরকারি অতিথিশালা। গারসেটির আসার খবর পেয়েই তড়িঘড়ি হ্যালি রোডের বঙ্গভবনে এসে পৌঁছান রাজ্য সরকারের রেসিডেন্ট কমিশনার দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানাতে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের জন্য ব্যবস্থা করা হয় ট্র্যাডিশনাল বেঙ্গলি কুইজিন বা বাঙালি খাবার-দাবারের। মার্কিন রাষ্ট্রদূত গারসেটি বাংলার পদ চেখে দেখতে চেয়েছিলেন বলে একাধিক বাঙালি পদও রান্না করা হয়। মধ্যাহ্নভোজে আম পান্না থেকে ফিস ফ্রাই, শুক্তো থেকে লুচি-কষা মাংস, এমনকি শেষপাতে আমের চাটনি, রসগোল্লা, সন্দেশও খান তিনি। রাষ্ট্রদূতের রসনানিবৃত্তির জন্য ছিল কাঁচাকলা দিয়ে শুক্তো, মোচা ঘণ্ট, থোড়ের চাপর ঘণ্ট, কাতলা কালিয়া, ভেটকি পাতুরি, লুচি, কষা মাংস। তাঁর জন্য রান্না করেন বাঙালি শেফ সমর মুখোপাধ্যায়। তাঁর হাতের রান্না খেয়ে প্রশংসাও করেন গারসেটি। বাংলার ফুটবল, সংস্কৃতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বাঙালি খাবারের প্রশংসা করেন। বঙ্গভবন ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, ‘শীঘ্রই দেখা হবে কলকাতায়।’ আজ সেই সূত্রেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটিকে রাজ্যে আসার জন্য সাদর আমন্ত্রণ জানান ডেরেক ও’ব্রায়েন।