ধূপগুড়ি: সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন আয়োজিত লেভেল ফাইভ পরীক্ষায় সফল হয়ে রাজ্যের একমাত্র মহিলা হিসেবে এবারে জাতীয় স্তরের সহকারী রেফারি হলেন ধূপগুড়ির মালতী রায়। গত ১৫ থেকে ১৭ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে অনুষ্ঠিত জাতীয় রেফারি বাছাইয়ের শিবিরে ধাপে ধাপে পরীক্ষা দেন দেশের প্রায় দুশো প্রতিনিধি৷ শারীরিক সক্ষমতা, লিখিত পরীক্ষা, ফিল্ড প্র্যাকটিকাল এবং সবশেষে ভাইভার পর গত ২২ এপ্রিল ফল প্রকাশ করে এআইএফএফ। এ বছর জাতীয় রেফারি বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৫ জন। যার মধ্যে বাংলার প্রতিনিধি দুই তরুণ। এছাড়া সহকারী রেফারি ক্যাটিগোরিতে সফল হয়েছেন মোট ২৮ জন যাঁদের মধ্যে মালতী ছাড়া বাংলার অপর প্রতিনিধি মহম্মদ জামির হোসেন লস্কর।
বছর তেইশের মালতী বর্তমানে শারীরশিক্ষায় স্নাতক স্তরের শিক্ষার্থী। ছোট থেকে ফুটবলই তাঁর একমাত্র প্রেম বলে জানান ধূপগুড়ির সাঁকোয়াঝোরা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলের উত্তর গোঁসাইরহাট এলাকার বাসিন্দা ওই তরুণী। কৃষি শ্রমিক বাবা, ভাই, মা নিয়েই পরিবার। সংসারে টানাটানি থাকলেও পূর্ব মল্লিকপাড়া হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকেই ফুটবলের প্রতি ঝোঁক৷ এরপর ধূপগুড়ি উইমেন্স এফসি দলে ভিড়ে সেই ফুটবল প্রেম যেন চরমে পৌঁছায়৷ বছর চারেক আগে সুকান্ত মহাবিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রথম রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর থেকেই একাজে মন লেগে যায় মালতীর। এরপর কয়েক ধাপ পেরিয়ে মার্চে কলকাতায় ইস্ট জোন সিলেকশনে অংশ নিয়ে সফল হন তিনি। এরপরেই জাতীয় স্তরের রেফারি বাছাই পরীক্ষায় বসার ছাড়পত্র মেলে৷
দেশের নামী লিগে ম্যাচ পরিচালনার ছাড়পত্র পাওয়া মালতীর গলায় যেন প্রত্যয়ের সুর, ‘গ্রাম থেকে অভাব এবং প্রতিকূলতাকে হারিয়ে উঠে আসা আমরা সহজে হার মেনে নিতে পারি না। আপাতত লক্ষ্য সহকারী হিসেবে দু’বছর কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে রেফারি হওয়ার, দেশের বড় লিগগুলো বিশেষ করে ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে অংশ নেওয়ার।’
২০১৯ সালে সুব্রত ধর এবং ২০২১ সালে প্রণয় সাহা ধূপগুড়ি মাঠ থেকেই উঠে এসে জাতীয় রেফারি নির্বাচিত হন। ২০২২ সালে জাতীয় সহকারী রেফারি হন ধূপগুড়ির আশরাফুল আলম। এঁরা সকলেই বর্তমানে দেশের সেরা ফুটবল লিগগুলোয় ম্যাচ পরিচালনা করেন। তবে মালতীই ধূপগুড়ির প্রথম মহিলা হিসেবে এই স্বীকৃতি পেলেন। প্রাক্তন ছাত্রীর সাফল্যে উৎসাহিত ধূপগুড়ি উইমেন্স এফসির কোচ অজিত দে বলেন, ‘মালতীর সাফল্য স্বপ্ন দেখায় ধূপগুড়ি থেকেও দেশের ক্রীড়া মানচিত্রে স্থান করে নেওয়া সম্ভব।’ সুব্রত ধর বলেন, ‘ধূপগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গে পরিশ্রমী প্রতিভার অভাব নেই। সমস্যা শুধু পরিকাঠামো। মালতীর সাফল্য সে কারণেই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’