বাণীব্রত চক্রবর্তী, ময়নাগুড়ি: পাঁচ থেকে ছয় বছর টানা দর্শকের অভাবে ধুঁকছিলই। দিনরাতের তিনটে শো চলত না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দুটো শো বন্ধ করে দিতে হত। দর্শক হত না। পুরোপুরি দরজা বন্ধ হয়ে গেল কোভিড পরিস্থিতির পর থেকে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ময়নাগুড়ি(Maynaguri) শহরের একমাত্র সিনেমা হল ‘ভারতী’ প্রেক্ষাগৃহের(Cinema Hall) দরজা খোলেনি আজও। শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে থাকা এই সিনেমা হল এখন রীতিমতো ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। জঙ্গলে ছেয়েছে সিনেমা হল চত্বর। চল্লিশের দশকে গড়ে ওঠা এই সিনেমা হলকে ঘিরেই এখানে গড়ে উঠেছিল ব্যবসা। গজিয়ে ওঠে অসংখ্য দোকানপাট। সিনেমা হলের দরজা বন্ধ হতেই দোকানপাট বন্ধ হতে থাকে। বর্তমানে খুবই কম সংখ্যক দোকানপাট রয়েছে। শহরের মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ‘সিনেমা হল মোড়’ নামটুকুই রয়ে গিয়েছে। কমেছে দিনভর সেই মানুষের আনাগোনাও।
স্বাধীনতার আগে ১৯৪৪-১৯৪৫ সালে চালু করা হয়েছিল সিনেমা হল। ১৯৭২ সালে ময়নাগুড়ির বাসিন্দা প্রয়াত ললিতমোহন সাহা কিনেছিলেন হলটি। বর্তমান মালিক তাঁর ছেলে নীলোৎপল সাহা। নীলোৎপল বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকেই সিনেমার বাজার ভয়াবহ খারাপ হয়ে যায়। তার আগে দিনরাত তিনটি শো চলত। তাতেও জায়গা দেওয়া যেত না। ২০১৪ সালের পর থেকে একটির বেশি শো চালানো যায়নি। তাতেও দর্শক সংখ্যা থাকত ১৫ থেকে ২০ জন। কোভিডের পর যা পরিস্থিতি হল আর চালানো গেল না।’
রিলিজ ডেটেই হিট হিট সিনেমা আসত এক সময় ভারতীতে। সিনেমা হল চত্বর থাকত বেশ জমজমাট। ডে, ম্যাটিনি এবং নাইট শো হত তিনটে শিফটে। তাও টিকিট বেজায় ব্ল্যাক হয়েছে সেই সময়। আশপাশ এলাকার দোকানপাট ছিল বেশ জমজমাট। বহু মানুষ সিনেমা হলের কাজেও যুক্ত ছিলেন। শো শুরুর ঠিক আধ ঘণ্টা আগে থেকেই বাংলা সুপারহিট গান বাজত মাইকে। আর বাজত শো শুরুর ওয়ার্নিং বেল। সেই হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢোকা ঘুটঘুটে অন্ধকার ছেয়ে থাকত ভেতর। ৯৯৯টি আসন বিশিষ্ট হলে ম্যানেজমেন্টের লোকেরা টর্চের আলোয় টিকিট চেক করে সিট নম্বর দেখিয়ে দিতেন। আজ সবটাই অতীত। কেবল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভারতীর সেই ভূতুড়ে বাড়িটাই।
নতুন সিনেমা এলেই খুব ভোরে অ্যাম্বাসাডরে মাইক বেঁধে মাইকিং করা হত। নাগরিকদের ঘুম ভাঙত সেই আকর্ষণীয় ঘোষণায়। যিনি সেই মাইকিং করতেন বৃদ্ধ বয়সে এখন শহরের একটি হোটেলে কাজ করে দিনপাত করছেন। পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শুভাশিস সান্যাল দীর্ঘ কুড়ি বছরেরও বেশি সময় ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভারতী সিনেমার কথা সবটাই আজ সোনালি অতীত। ২০১৪ সালেরও আগে যখন সিনেমার বাজার খুব খারাপ তখনই বেরিয়ে এসেছি। অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।’ সিনেমা হল ঘেঁষে দোকান প্রদীপ সাহার। তিনি বলেন, আগে দোকানের মুখটা সিনেমা হলের দিকে ছিল। পরে মুখটা ঘুরিয়ে দিয়েছি পাকা রাস্তার দিকে। ময়নাগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান মনোজ রায় বলেন, ‘একটাই সিনেমা হল ছিল। সেটাও বন্ধ হয়ে গেল।’