কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, পুর নিয়োগ দুর্নীতি থেকে শুরু করে এবার র্যাশন বণ্টন দুর্নীতিকাণ্ড। সাম্প্রতিককালে রাজ্য রাজনীতিতে পরতে পরতে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। র্যাশন বণ্টন দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজ্যের বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁকে হেপাজতে নিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইডি সূত্রে খবর, এই মামলার তদন্তে উঠে এসেছে একটি মেরুন ডায়েরির কথা। আদালতে ইডির দাবি, সেই ডায়েরির উপরে লেখা রয়েছে ‘বালুদা’। জ্যোতিপ্রিয়র ডাক নাম বালু। তিনি সেই নামেই বেশি পরিচিত।
ইডি’র দাবি, জ্যোতিপ্রিয়র এক ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই ডায়েরি, সেখানে বিভিন্ন তারিখের পাশে প্রচুর টাকা লেনদেনের তথ্য রয়েছে। কাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, কাদের টাকা দেওয়া রয়েছে, তারও উল্লেখ রয়েছে সেখানে। এর আগে এই মামলায় গ্রেপ্তার হয় ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। মন্ত্রীকে বাকিবুরের সামনে বসিয়ে জেরা করলে আরও নতুন তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ইডি’র এও অভিযোগ, ২০১৬ সালে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নিয়মমাফিক যে হলফনামা জমা দিতে হয়েছিল মন্ত্রী তথা নির্বাচনে প্রার্থী জ্যোতিপ্রিয়কে, সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে ৪৫ হাজার টাকা রয়েছে। ইডির দাবি, তার এক বছরের মধ্যে মন্ত্রীর স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ছ’কোটি টাকা জমা পড়েছে। এত কম সময়ের মধ্যে কী করে এত টাকা এল? গতকাল বেশকিছু তথ্য আদালতে পেশ করেন ইডি’র আইনজীবীরা। তাঁদের অভিযোগ, এই দুর্নীতিকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত তিনিই ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী। পরে ২০২১-এ তাঁকে বনমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হলেও খাদ্য দপ্তরের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁকে রেখে দেওয়া হয়েছিল, যেখান থেকে প্রচুর টাকার লেনদেন হত।
প্রসঙ্গত, র্যাশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। শুক্রবার তাঁকে ব্যাংকশাল আদালতে তোলা হয়। কিন্তু শুনানি চলাকালীন আচমকা জ্ঞান হারান তিনি। এরপরই মন্ত্রীকে তাঁর পছন্দের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বাতানুকুল অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেই হাসপাতালেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুল্যান্সে ছিলেন স্ত্রী মণিদীপা মল্লিক এবং কন্যা প্রিয়দর্শিনী মল্লিক ও ইডির দুই আধিকারিক। আদালত জানিয়েছে, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বইতে হবে মন্ত্রীর পরিবারকেই। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। এমআরআই করা হয় জ্যোতিপ্রিয়ের। স্ক্যান করারও পরিকল্পনা রয়েছে। সব পরীক্ষার পর মন্ত্রীকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয় চিকিৎসকদের পরামর্শে। এদিকে এই দুর্নীতিকাণ্ডে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।