দিনহাটা: বৃহস্পতিবার তখন বেলা বারোটা হবে। দিনহাটা মহকুমা (Dinhata sub-divisional Hospital) বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের লম্বা লাইন। চোখের ডাক্তার দেখাতে এসেছেন সত্তরোর্ধ্ব শর্বাণী সাহা। তিনি বহির্বিভাগের বাইরে বসে আছেন নাকে রুমাল চাপা দিয়ে। কাছে যেতেই রহস্য পরিষ্কার হল। বহির্বিভাগের বাইরে শিশু বিভাগের সামনে কালো প্লাস্টিকে মোড়া চিকিৎসা বর্জ্যের সঙ্গে তুলো, ব্যান্ডেজ, উচ্ছিষ্ট ডাঁই হয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে জমে থাকায় তাতে পচন ধরেছে। আর সেই গন্ধে মাছি ভনভন করে উড়ে বেড়াচ্ছে বহির্বিভাগ চত্বরে। অনেকেই এই গন্ধ সহ্য করে নাকে রুমাল চাপা দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন চিকিৎসকদের জন্য।
এঁদের কেউ এসেছেন দিনহাটা (Dinhata) ভেটাগুড়ি থেকে। কেউ আমবাড়ি থেকে। তাই গন্ধের জন্য তাঁদের চলে গেলে চলে না। তাই বর্জ্যের দুর্গন্ধ সহ্য করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চলছে চিকিৎসককে দেখানো ও ওষুধ নেওয়া। তবে রোগীরা শুধু আজকের দিনেই এইরকম অভিজ্ঞতার সাক্ষী হচ্ছেন তা নয়, হাসপাতালের এই নরককুণ্ড দশা এখন প্রতিদিনের চেনা ছবি হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে হাসপাতাল থেকে পুর প্রশাসন কোনওমতে তাদের দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর গত পনেরোদিন থেকে জমে থাকা এই বর্জ্য সরানো হচ্ছে না। আর তার জেরেই চারদিকে এই পচা দুর্গন্ধ।
এদিন ভেটাগুড়ি থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন সফিনা বিবি। বললেন, ‘টিকিট কাটা, চিকিৎসক দেখানো থেকে ওষুধ নিতে সকাল থেকেই এখানে আছি। আর পুরো সময়টা এই গন্ধের মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, মহকুমা হাসপাতালের অবস্থা এরকম ভাবাই যায় না।’ আমবাড়ির কাজল ভৌমিক স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘এখানে রোগ সারাতে এসে এখন দেখছি রোগী হয়ে ফিরতে হবে।’
কী কারণে হাসপাতালের এই নরক দশা?
খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, মূলত হাসপাতালের বর্জ্য সরানোর দায়িত্ব পুরসভাকে দেওয়া রয়েছে। যেখানে হাসপাতালের আবর্জনা প্রতিদিন ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলার কথা সেখানে দশ থেকে পনেরো দিন পরপর বর্জ্য সাফাই করা হচ্ছে। এরফলে হাসপাতালের বহির্বিভাগের বাইরে জমেছে প্রতিদিনকার বর্জ্যের একটা বড় অংশ। আর তা থেকেই ছড়াচ্ছে দূর্গন্ধ।
হাসপাতাল সুপার রণজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘৩০০ শয্যার হাসপাতাল হওয়ায় বর্জ্যের পরিমাণও বেশি। এর আগেও চিঠি করায় পরিষ্কার হয়। তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।’ পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীশংকর মাহেশ্বরী বলেন, ‘ভ্যাট সমস্যার জেরে বর্জ্য সাফাইয়ে সমস্যা হচ্ছে, আমরা যখনই পারছি হাসপাতালের বর্জ্য সবার আগে পরিষ্কার করছি।’ তবে নিত্যদিনের এই দায় ঠেলাঠেলির জেরে ভুক্তভোগী হচ্ছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা (Patients)।