শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: টেলারিং, কেঁচো সার তৈরি, মুদিখানার সামগ্রী বিক্রি তো ছিলই, এবার ডুয়ার্সের (Dooars) রুগ্ন হান্টাপাড়া ও মধু চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের মেয়েরা এগিয়ে এসেছেন বাহারি মোমবাতি ও শৌখিন হ্যান্ডব্যাগ তৈরিতেও। সমবায় গড়ে এই উদ্যোগের পেছনে লুকিয়ে আছে চাকরির আকালের বাজারে নিজেদের স্বাবলম্বী করা। পাশাপাশি স্বপ্নের জাল ছড়িয়ে দেওয়া অন্যান্য বাগানের ছেলেয়েমেদের মধ্যেও।
আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলার ওই দুই বাগানে বেশ কিছুদিন আগেই রেজিস্টার্ড সমবায় তৈরি হয়েছিল। একেকটি সমবায়ে অন্তত ১০০ জন করে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ে রয়েছেন। প্রথমে মধু চা বাগানের সমবায়টি কাপড়ের ব্যবসা করে লাভের মুখ দেখে। তা এখনও চলছে। এরপর হান্টাপাড়ায় চালু হয় একই কায়দায় মুদিখানার সামগ্রী বিক্রি। সেটাও সফল হয়। মধু চা বাগানের সমবায় এগিয়ে আসে কেঁচো সার তৈরিতেও। ইতিমধ্যেই ওই সমবায় বেশ কয়েক টন সার কিলো প্রতি ৮ টাকা করে বিক্রি করেছে। হান্টাপাড়ার ছেলেমেয়েরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ইট তৈরিরও। পরে সমবায় দপ্তরের কাছ থেকে আড়াই লক্ষ টাকার অনুদান পেয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও কিনে ফেলেছেন তাঁরা। চা সুন্দরী এক্সটেনশন প্রকল্পে রাজ্যের কাছ থেকে পাট্টা প্রাপক শ্রমিকরা বাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেয়েছেন। ওই বাড়ির ইটের জোগানদার হিসেবে সমবায়টি কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
এবারে হান্টাপাড়ায় বিভিন্ন ধরনের মোমবাতি তৈরির প্রশিক্ষণ শেষে বরাতও মিলতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। বিভিন্ন গির্জায় ভালো মানের মোমবাতি সরবরাহ করছেন সেখানকার ছেলেমেয়েরা। অন্যদিকে, মধু বাগানের শতাধিক মহিলা শিখে নিয়েছেন ব্যাগ তৈরির কৌশল। সেগুলি বিক্রিও হচ্ছে। ওই সমবায়টি এবারে কাপড়ের দোকান চালানোর জন্য আড়াই লক্ষ টাকা সরকারি অনুদান পাওয়ার পথে। কলকাতা থেকে এসে হান্টাপাড়া বাগানে মোমবাতি এবং মধু বাগানে ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে গিয়েছেন সমবায় দপ্তরের আওতাধীন ইনস্টিটিউট অফ কোঅপারেটিভ ম্যানেজমেন্ট ফর অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (ইকমার্ড)-এর প্রশিক্ষকরা।
হান্টাপাড়ার আদিবাসী উত্থান মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ-এর চেয়ারম্যান বাসিল কান্ডুলনা বলেন, ‘এখন বাজার তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য। আশা করছি সেটাতেও সফল হব।’ ইকমার্ডের প্রশিক্ষক সুখেন্দু নাথ বলেন, ‘কুটিরশিল্প হিসেবে এই উদ্যোগ দারুণ সফল হবে বলে আশা করছি।’ আরেক প্রশিক্ষক মনোজিৎ পালের কথায়, ‘আমাদের তরফেও উৎপাদিত সামগ্রীর বিপণনে সবরকম সহযোগিতা করা হবে।’
মধু চা বাগানের সমবায়টির সম্পাদক কণিকা ধানোয়ারের কথায়, ‘আদিবাসী সমাজে ব্যবসা করার প্রবণতা কম। ব্যবসায় আগ্রহ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। কম পুঁজির বিকল্প রোজগারের এই পন্থা আরও প্রসারিত হবে বলে আমাদের আশা।’