নাগরাকাটা: অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে বৃষ্টি নেই। ছিটেফোঁটা যা হয়েছে তাতে মাটির ওপরের অংশটুকুও ভেজেনি। ঠান্ডা ছিল জাঁকিয়ে। সবমিলিয়ে শীতের শুখা মরশুমে ঘুমিয়ে থাকা গাছ এবার এখনও জাগেনি। এদিকে সোমবার থেকেই টি বোর্ডের নির্দেশিকা অনুযায়ী ডুয়ার্স-তরাইয়ের চা বাগানে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এবারের নয়া মরশুম। কুঁড়ি না আসায় বেশিরভাগ বাগান এদিন কাঁচা পাতা তোলার কাজ শুরুই করতে পারেনি। যা পরিস্থিতি তাতে চলতি মাসে বাগানগুলি উৎপাদন শুরু করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। চা গবেষণা সংস্থার তরাই শাখার অ্যাডভাইজারি অফিসার ডঃ তৃণা মণ্ডল বলেন, ‘এবার দেরিতে শুরু হওয়া শীতের স্থায়িত্ব বেশি। দু’-তিনদিন হল রাতের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। সাড়ে ৪ মাস ধরে নেই বৃষ্টিপাত। সব মিলিয়ে এর প্রতিকূল প্রভাব পড়েছে চা গাছের ওপরে। যে কারণে নতুন পাতা আসার কাজটি থমকে গিয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষ লগ্ন থেকে পরিস্থিতি অনুকূল হতে পারে বলে ধারণা।’
চা মহল জানাচ্ছে, এবার ডিসেম্বরে তেমন শীত ছিল না। ঠান্ডা পড়া শুরু হয় জানুয়ারি থেকে। ফলে চা গাছের শীতকালীন সুপ্তাবস্থা বলতে যা বোঝায় সেটাও দেরি করে শুরু হয়েছে। তাই ঘুমন্ত গাছে কুঁড়ি আসতেও বিলম্ব হচ্ছে। চা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখন স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় ফার্স্ট ফ্লাশের মরশুম শুরু হবে। ঝাঁকে ঝাঁকে কুঁড়ি আসার জন্য প্রয়োজন দিনের তাপমাত্রার পাশাপাশি রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধিও। সঙ্গে শীতকালীন বৃষ্টিপাত অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। যা অক্টোবরের ১৪ তারিখের পর থেকে আর মেলেনি। বৃষ্টির এই অপ্রতুলতার কথা জানাচ্ছে হাওয়া অফিসও। আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের আধিকারিক ডঃ গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘শীতের জানুয়ারিতে সাধারণত যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় এবারে তাতে স্থানভেদে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতি রয়েছে।’
মেটেলির ইনডং চা বাগানের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ম্যানেজার রজত দেব বলেন, ‘১৯ তারিখ থেকে কাঁচা পাতা তোলা শুরু করব। কতটুকু মিলবে বুঝে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।’ উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চা বাগান চ্যাংমারির ম্যানেজার গজেন্দ্র শিশোদিয়া বলছেন, ‘এখন যা পাতা আছে তা বলার মতো কিছু নয়। ১৪ তারিখ থেকে কাজ শুরু হবে। আশা করছি পরের সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’ দলগাঁও চা বাগানের ম্যানেজার মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘সবে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। এটাই একমাত্র আশার কথা।’ কনটেম্পোরারি ব্রোকার প্রাইভেট লিমিটেডের ভিজিটিং এজেন্ট সুজয় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, যাদের কৃত্রিম জলসেচের ব্যবস্থা ছিল তারা অল্প কিছু পাতা পাবে। বাকিদের পরিস্থিতি সঙ্গিন। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর কথায়, ‘নতুন কুঁড়ির অভাবে বাগানে এখন খাঁখাঁ পরিস্থিতি।’