- সুনন্দ অধিকারী
‘তারা’ কারা? এই গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ।
সবুজ এই গ্রহে বর্তমানে মানুষের সংখ্যা কমবেশি ৮০৮ কোটি। তার মধ্যে ভারতের ১৪৪ ও চিনের ১৪২ কোটি। অর্থাৎ এই দু’দেশের জনসংখ্যার যোগফল বিশ্বের মোট লোকসংখ্যার এক-চতুর্থাংশের বেশি। এর সঙ্গে যদি গোটা এশিয়া মহাদেশকে যোগ করা হয়। তাহলে তা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।
উলটোদিকে আমরা জানি অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ প্রভৃতি মহাদেশে লোকসংখ্যা অপেক্ষাকৃত অনেক কম। আমেরিকা তো বটেই। এমনকি আফ্রিকা মহাদেশের আয়তনানুযায়ী লোকসংখ্যা কম। অবশ্য এখানে আরও একটি বিষয় বিচার্য। তা কেবল আয়তন নয়। দেশটির বাসযোগ্য অঞ্চল। এবং এটি এলেই কান টানলে মাথা আসার মতো এসে পড়ে জনঘনত্বের প্রশ্ন। আপাতত আমরা অত বিশদে না গিয়ে শিরোনাম মোতাবেক মূল প্রসঙ্গটুকু ছুঁয়ে যাই কেবল।
ঠিক এইখানে প্রশ্ন উঠে আসে। তাহলে কি ওই একাকিত্ব ব্যাপারটা কম জনসংখ্যার দেশের বেলাই শুধু প্রযোজ্য? যেখানে জনঘনত্ব বেশি সেখানে এর প্রকোপ নেই বা যৎকিঞ্চিৎ? এককথায় দুটি প্রশ্নেরই উত্তর ‘না’। ওই ‘একাকী’ বিষয়টা বর্তমান সমগ্র মানবজাতিকে নিয়েই। তবে তুলনায় লো ও মিডল ইনকাম গ্রুপের দেশের সমস্যা অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতর দেশের চাইতে।
শুনতে অবাক লাগতে পারে। কিন্তু বর্তমানে ‘হু’ (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন) বিশ্বজুড়ে মানুষের এই একাকিত্বের উপশম লাঘবেই প্রোজেক্ট নিতে বাধ্য হয়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্বের সমস্যা পৃথিবীজুড়ে অতি দ্রুত বাড়ছে। একে প্রতিরোধ না করা গেলে মহামারির চেহারা নেবে।
মানুষে মানুষে এই বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্ব তার শরীর ও মনের স্বাস্থ্যে সুগভীর প্রভাব ফেলছে। ক্ষতি বিচারে যা কিনা ধূমপান, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদির মতোই মারাত্মক! ফলে আক্রান্ত মানুষটির জীবনধারণের মান কমছে শুধু নয়। সর্বোপরি মানুষটির মৃত্যুকে নিকটে নিয়ে আসছে।
এখন বয়স্কদের প্রতি ৪ জনে ১ জন এর স্বীকার। বয়ঃসন্ধির ক্ষেত্রে এই হার শতকরা ৫ থেকে ১৫ ভাগ। ‘হু’ এই সমস্যাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই বিবেচনা করছে। তার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ২০২৪-’২৬-এর জন্য একটি কমিশন গঠন হয়েছে। তারা বিশ্বব্যাপী অ্যাজেন্ডা তৈরি করবে এর মোকাবিলায়।
এ শুধু সেই আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষতি করে না। এই সমস্যা জাতি ও সমাজেও তার প্রভাব ফেলে। এর সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে উদ্বেগ, আত্মহত্যা প্রবণতা, অবসাদ ইত্যাদি সমস্তরকম নেতিবাচকের। যা কিনা আবার ডিমেনশিয়া, হৃদযন্ত্র সমস্যা, স্ট্রোক ইত্যাদি অসুখের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। প্রাথমিক অবস্থায় কোনও পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই এই সমস্যা অনেকটা স্লো পয়জনের মতো। বর্তমান মুঠোফোন দুনিয়ায় লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার লাইক ভিউ সত্ত্বেও একাকী মানুষ।
অথচ ‘বহু জনতার মাঝে অপূর্ব একা’। ব্যক্তিমানুষটির অনেক সাধনার ফল। তখন তা আশীর্বাদ। সেই একা তাই ‘অপূর্ব’। কিন্তু আমরা এতক্ষণ যে একা হয়ে যাবার কথা বললাম। তা মানুষটির একাকিত্ব। তাই তা অভিশাপ।
এই সমস্যাই আগামীর মহামারি। সময় আসেনি কি এখনও একসঙ্গে বেঁধে থাকার?
(লেখক সাহিত্যিক)