- শীলাঞ্জন ভট্টাচার্য
ডুয়ার্সের সীমানা থেকে একেবারে ১০,৫০০ ফুট উঁচু। পূর্ব হিমালয়ে প্রাকৃতিক জীবনের বৈচিত্র্যের বিরাট সম্ভার নিয়ে রয়েছে নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যান। উদ্যানের গহন অরণ্যে হেঁটে যাওয়া ছাড়া বিশেষ কোনও রাস্তা নেই। এই বৈচিত্র্যই অন্য জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য থেকে আলাদা করে রেখেছে নেওড়া ভ্যালিকে।
পর্যটন অবশ্যই প্রয়োজন। স্থানীয় মানুষই রোজগারের রাস্তা পান। তবে তাই বলে জঙ্গলের ভেতর গাড়ি ঢোকানো কোনওভাবে বরদাস্ত করা যায় না। যত্রতত্র রিসর্ট, দোকান বানানোর কারণেই জঙ্গল শেষ হয়ে যায়। নেওড়া ভ্যালির ক্ষেত্রে বন দপ্তরের নজরদারিতে ছোট ছোট দলে ট্রেকিংয়ে মাধ্যমে পর্যটন বাড়ানো যেতে পারে।
নেওড়া ভ্যালিতে ইতিমধ্যেই বেশকিছু বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর সন্ধান মিলেছে। গন্ডার ছাড়া অনেক পরিচিত প্রাণীরই সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে ক্লাউডেড লেপার্ড, গোল্ডেন ক্যাটের মতো প্রাণীর সন্ধান। পাখির কথা তো বলে শেষ করা যাবে না। মজার ব্যাপার, এখনও পর্যন্ত ৯০ শতাংশ অংশই খুঁজে বের করা যাযনি। যা আরও অনেক ছোট প্রাণী, ছোট কীটপতঙ্গের সন্ধান দিতে পারে।
এই কাজটার জন্য প্রয়োজন একটি রিসার্চ টিমের। ওই টিম স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, বন দপ্তরের সহযোগিতায় এই কাজগুলো করে যাবে। আমরা এভাবেই তিন বছর কাজ করে একটি মানচিত্র তৈরি করেছি। তবে নেওড়া ভ্যালিতে কাজ করা মোটেই সহজসাধ্য নয়। কখনও মেঘ, কখনও বৃষ্টি। পিচ্ছিল রাস্তার মধ্যে দিয়ে চলাফেরা করতে লাগে। খাবারের কষ্ট, ঠান্ডার মধ্যে থাকতে হয়। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এমনও রয়েছে যারা কিছুদিন থেকে ফিরে এসেছে। সেক্ষেত্রে কমবয়সি বিজ্ঞানীরা এই রিসার্চ করতে পারেন। বন দপ্তরের গ্রাউন্ড স্টাফদেরও এখন বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে নজরদারির জন্য। এবারে বন দপ্তরের আরও নজর দেওয়া প্রয়োজন। আসলে, এটা এমনই একটা উদ্যান যেটা সবার জন্য নয়। টাকা খরচ করে নেওড়া ভ্যালিতে হেঁটে যদি কেউ প্রকৃতির আনন্দ নিতে পারে, তাহলে কোনও অসুবিধা নেই।
তবে নেওড়া ভ্যালির কথা উঠলে বাঘের প্রসঙ্গ না উঠলেই নয়। সম্প্রতি সিকিমে বাঘের দেখা মিলেছে। সেটাও নেওড়া ভ্যালি রেঞ্জের মধ্যেই পড়ে। এর থেকে বোঝা যায়, বাঘ ১০,০০০ ফুট ওপরেও থাকছে। গাউরও ৩,০০০ ফুট ওপরে উঠতে পারে। আসলে প্রজনন ও পরবর্তী সময়টায় এই ধরনের প্রাণী পাহাড়ের গা বেয়ে বিস্তর ওপরেও ঘোরাফেরা করতে পারে। তবে একটা কথা বারেবারে না বললে নয়, জঙ্গলের ভেতর গাড়ি যাতে কোনওভাবেই না ঢোকে। গাড়ি ঢোকানোর জন্য জঙ্গলের ভেতর রাস্তা যাতে না করা হয়। এব্যাপারে আমাদের সকলকেই একত্রিত হতে হবে। বেঁচে থাক প্রকৃতি। বেঁচে থাক নেওড়া ভ্যালি।
সোজা কথা আবার স্পষ্ট করে বলে দেওয়া ভালো। নেওড়া ভ্যালি যেমন দুর্গম রয়েছে, তেমনই থাকুক। এখানে টিপিক্যাল পর্যটকদের যাওয়ার কোনও দরকার নেই। যারা জাযগা ঘুরতে গিয়ে আবহাওয়া নষ্ট করে। নোংরা করে। বন্যপ্রাণীদের বিরক্ত করে অকারণ। জায়গাটা বাংলার সম্পদ। এটাকে এভাবেই রেখে দেওয়া সবচেযে জরুরি।
(লেখক ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রাণীবিদ্যার প্রফেসর)