নকশালবাড়ি: হাতির আনাগোনায় এক সময় বন্ধ হয়েছিল চাষাবাদ। এখন সেই হাতি (Elephant) আসা বন্ধ হওয়ায় খুশি কৃষকরা। নকশালবাড়ির (Naxalbari) জঙ্গল লাগোয়া খেতে ভুট্টা চাষে লাভ পেয়েছেন বহু কৃষক। বন দপ্তরের দাবি, নেপালে (Nepal) ফেন্সিংয়ের মেরামত হয়নি। অনাবৃষ্টিতে কলাবাড়ি, টুকরিয়াঝাড় বনাঞ্চলের ঝোরাগুলি শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে নেপালের দিকে থাকা মেচি নদীতে জল খেয়ে হাতির দল সহজেই ফেন্সিং পেরিয়ে নকশালবাড়ি ঢুকে যেত। এখন হাতিগুলি জঙ্গলে বনকর্মীদের নজরদারিতে রয়েছে। ফলে হাতির আনাগোনা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
কলাবাড়ি বনাঞ্চলে পাশেই কিলারাম, কেটুগাবুর, সুরজবর, রকমজোত, বড় মণিরাম, নেহালজোত সংসদ, অলডাঙ্গি, মিরজাংলা, নিরাপানি সংসদ। এখানকার কৃষকরা (Naxalbari Farmers) হাতির ভয়ে ভুট্টা চাষ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কারণ, প্রতি বছর এই সময় ভুট্টার লোভে হাতি গ্রামে তাণ্ডব চালাত। ফসল নষ্ট, ঘরবাড়ি ভাঙার পাশাপাশি মানুষেরও মৃত্যু হত। এবার হাতির আনাগোনা কমায় ভুট্টার পাশাপাশি ধান চাষও ভালো হয়েছে। কিলারামজোতের বাসিন্দা মহম্মদ ছোটে হাতির ভয়ে ভুট্টা চাষ বন্ধ করেছিলেন। এবছর ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। অধিকাংশই ঘরে তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে বহু টাকা ঋণ করে ২০ বিঘা জমিতে ভুট্টা ফলিয়েছিলাম। কিন্তু হাতি সব শেষ করে দিয়েছিল। এবছর সাহস করে লাগিয়েছিলাম। কিন্তু হাতি না আসায় ফসল ঘরে তুলতে পেরেছি।’ উত্তর রামধনজোতের বিনয়কৃষ্ণ দাহাল জানান, গত বছর এই সময় হাতি উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকত। এবার পরিস্থিতি বদলেছে। ঘরে ঘরে ভুট্টা চাষ হয়েছে। বহুদিন ধরে কলাবাড়ি বনাঞ্চলে হাতির গতিবিধি নিয়ে কাজ করা পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের সদস্য ঋত্বিক বিশ্বাস বলেন, ‘এবছর হাতির গতিবিধি অনেকটা বদলেছে। বৃষ্টি এর বড় কারণ। কলাবাড়ি বনাঞ্চলের একাধিক ঝোরা শুকিয়ে কাঠ। ভারতের দিকে মেচি নদীতেও জল নেই। যদিও নেপালের দিকে আছে। জলের খোঁজে হাতির দল নেপালের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছে। সেখান থেকে ফেন্সিং পেরিয়ে নেপালের বামুনডাঙ্গি, দেবীডাঙ্গা, সারুগাড়া, তিরিং, পাতাপুর, রোংয়ে চলে যাচ্ছে। বৈদ্যুতিক ফেন্সিংগুলি মেরামত না হওয়ায় হাতিরা অবাধে যাতায়াত করছে। এজন্য ভারতীয় কৃষকরা বেঁচে গিয়েছেন।’
২০১৫-’১৬ সালে কলাবাড়ি বনাঞ্চল থেকে ভারতীয় হাতির দল আটকাতে ভারত-নেপাল সীমান্তের কাঁকরভিটা থেকে লোহাগড়ের তিলিং পর্যন্ত ১৭.৫ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক ফেন্সিং দিয়েছিল সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন। ইদানীং সেই ফেন্সিং অকেজো। কার্সিয়াং ডিভিশনের কলাবাড়ি-পানিঘাটার রেঞ্জ অফিসার সমীরণ রাজ বলেন, ‘জঙ্গলে যেখানে এক সময় শতাধিক হাতি থাকত সেখানে এখন মাত্র ২০টির মতো রয়েছে। এদের গতিবিধিতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ তবে বৃষ্টি হলে হাতিরা জঙ্গলে ফিরবে বলে তিনি জানান।