কলকাতা: শিলিগুড়ির মাটিগাড়া কিশোরী খুনকাণ্ডে সরব রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার এই ঘটনার আঁচ গিয়ে পড়ে বিধানসভায়। বিজেপি বিধায়করা অপরাধীর শাস্তি চেয়ে শোরগোল শুরু করেন বলে অভিযোগ। বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ মাটিগাড়ায় স্কুল ছাত্রীকে খুনের প্রতিবাদে মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ ও আটক করা প্রসঙ্গটি বিধানসভা অধিবেশনে উল্লেখ করেন। কিন্তু সংগত না বলে মনে করে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার প্রতিবাদে বিজেপি বিধায়করা স্লোগান তুলতে থাকেন। শেষে অধিবেশন ছেড়ে বেরিয়ে যান বিজেপি বিধায়করা। এরপর বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি, দোষীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যের মতো এনকাউন্টার করা উচিৎ। এদের সমাজে থাকাই উচিত নয়। এরা সব ঘৃণিত জীব, পাষণ্ড।’
মাটিগাড়ায় ছাত্রী খুনের প্রতিবাদে থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল বিজেপির। অভিযোগ, সেখানে পুলিশ বিজেপি নেতা, কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। তার বিরোধিতাতেই বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। এদিন ওয়াকআউট করে বেরিয়ে বিধানসভার বাইরে ‘হায় হায়’ স্লোগান তোলেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, মাটিগাড়ার ঘটনায় যারা দোষী, তাদের তো গ্রেপ্তার করা হয়ইনি। উলটে আমরা সেই দাবি জানাতে থানায় গেলে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার শুধু নারী নিরাপত্তা দিতেই ব্যর্থ নয়, শিশুদেরও সুরক্ষা করতে পারে না।
প্রসঙ্গত, সোমবার শিলিগুড়ি সংলগ্ন মাটিগাড়ার পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে স্কুল ছাত্রীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। মেয়েটির পরনে ছিল স্কুলের পোশাক। ওই কিশোরীকে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। জানা গিয়েছে, দার্জিলিং মোড় সংলগ্ন একটি নেপালি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া ছিল কিশোরী। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, সোমবার সাড়ে তিনটে নাগাদ এলাকারই এক পড়ুয়া স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে চিৎকারের শব্দ পায়। বাড়ি এসে বিষয়টি সে পরিবারের লোকেদের জানায়। এলাকার লোকজন মিলে পরিত্যক্ত বাড়িটিতে গিয়ে দেখতে পান, মাটিতে পড়ে রয়েছে ওই কিশোরীর রক্তাক্ত দেহ। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় মাটিগাড়া থানায়। ঘটনাস্থলে আসেন এসিপি রাজেন ছেত্রী, ডিসিপি অভিষেক গুপ্তা এবং মাটিগাড়া থানার পুলিশকর্মীরা। দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ওইদিনই গভীর রাতে শিলিগুড়ি পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। রাতেই তাকে থানায় নিয়ে আসা হয়। তবে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই কিশোরীর সহপাঠী ছিল না। তবে আগে থেকেই তাদের মধ্যে পরিচয় থাকতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। এদিকে অভিযুক্তকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে, এই দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে শিলিগুড়ি আদালতে আন্দোলনে শামিল হন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা। বিকেলে যখন অভিযুক্তকে আদালত থেকে বের করা হচ্ছিল, সেই সময় তার ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশ কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়েন বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পালটা লাঠিচার্জ করে। ঘটনাকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় শিলিগুড়ির কোর্টমোড়ে। এরপর রাতে পালপাড়ার লেলিন কলোনি এলাকায় অভিযুক্ত সহ আশেপাশের কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বজরং দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে। যদিও বজরং দলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। এদিকে এই ঘটনায় অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টা শিলিগুড়ি বনধের ডাক দিয়েছে হিন্দু সংগঠন।