মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: পুণ্যার্থীদের সেবায় নিযুক্ত ভাণ্ডারার আয়োজকদের কাছে এবার প্রথম ‘সিকিউরিটি মানি’ আদায় করছে বন দপ্তর। এখবর উত্তরবঙ্গ সংবাদে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এবার শিবরাত্রির সময় পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রেও পর্যটকদের মতো এন্ট্রি ফি নেবে বন দপ্তর?
শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে প্রত্যেক বছর নিখরচায় ভক্তরা জয়ন্তীর মহাকালের পুজো দিতে ভিড় করেন। এবারে পর্যটকদের কাছে আদায় করা এন্ট্রি ফিতে ছাড় দেওয়া হবে কি না, সেনিয়ে যদিও বন দপ্তর কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে পুণ্যার্থীদের সেবায় ভাণ্ডারার আয়োজন করেন যাঁরা, সেইসব আয়োজকদের সঙ্গে বনকর্তারা শুক্রবার একটি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে ১০ হাজার টাকা সিকিউরিটি মানি জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চাপাতেই পুণ্যার্থীরা বিচলিত হয়ে পড়েছেন। আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) শহরের বাসিন্দা শুভময় সরকার প্রত্যেক বছর শিবরাত্রিতে জয়ন্তী মহাকালের (Jayanti Mahakal Dham) পুজো দিতে যান। বলেন, ‘ওই সময় অন্যান্য বছর কোনও এন্ট্রি ফি নেওয়া হয় না। এবারে কী হবে সেটা বুঝে উঠতে পারছি না।’ একই কথা শহরের আরেক বাসিন্দা বাবলু রায়েরও।
বক্সা টাইগার রিজার্ভের (Buxa Tiger Reserve) এফডি অপূর্ব সেনকে বারবার ফোন করা হয়েছে। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপে এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে মেসেজ করাও হয়েছে। কিন্তু তিনি কিছুই জানাননি। তবে বন দপ্তরের এক কর্তা বলেন, ‘এখনও পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেডিএর চেয়ারম্যান গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। তিনি বলেন, ‘পুণ্যার্থীদের যাতে নিখরচায় জয়ন্তী মহাকালে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে বন দপ্তরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।’
শিবরাত্রি উপলক্ষ্যে খাদ্যবণ্টনের মতো সেবামূলক কাজের জন্য কেন ১০ হাজার টাকার বোঝা চাপানো হল, তা মানতে পারছেন না ভাণ্ডারার আয়োজকরা। আলিপুরদুয়ারের গোল্ডেন ডুয়ার্স ভাণ্ডারার সম্পাদক উজ্জ্বল দাস বলেন, ‘১০ হাজার টাকার বোঝা চাপানো হলে অনেকেই আগামীদিনে ভাণ্ডারা নিয়ে সেখানে যাবেন না।’ পাপ্পু গুপ্তা নামে এক ভাণ্ডারার সম্পাদক তো সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, ‘বন দপ্তর সিকিউরিটি মানি নিয়ে কার্যত একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়েছে।’
এরপর পুণ্যার্থীদের ক্ষেত্রে এন্ট্রি ফিতে বন দপ্তর ছাড় না দিলে লোকসভা ভোটের আগে এনিয়ে রাজনৈতিক মহলেও শোরগোল পড়ে যেতে পারে। বলছে ওয়াকিবহাল মহল।
বন দপ্তরের এই সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না স্থানীয় রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূল কংগ্রেসের পার্থপ্রতিম দত্ত বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব বন দপ্তর ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুক।’ পরিবেশ ঠিক রাখতে নিয়মের কড়াকড়ি নিয়ে অবশ্য দ্বিমত নেই কোনও জনপ্রতিনিধি বা পুণ্যার্থীর। কিন্তু এভাবে টাকার বোঝা চাপানো হলে সমস্যা বাড়বে বলেই মনে করছেন তাঁরা। উপপ্রধান পার্থপ্রতিম তো বলেন, ‘প্রয়োজনে পঞ্চায়েতের তরফ থেকে সেখানকার জঞ্জাল আমরাই সাফ করে দেব।’