দেওয়ানহাটঃ শনিবারের দুপুর। বাতাসে একটা শুষ্কতার ভাব। বহু গাছের পাতা ঝড়ে গিয়েছে। এরমধ্যেই তুফানগঞ্জের বলরামপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চেকাডরা গেরগেন্দারপাড় এলাকায় মানিক তালুকদারের বাড়িতে গিয়ে একটা স্তব্ধতা নজরে এল। গত ১১ নভেম্বর থেকে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারায় সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন মানিক। সেই থেকে চরম উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে থেকেও সুখবরের আশায় তাঁর পরিবার ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু ১৪ দিন পেড়িয়ে গেলে সেই ধৈর্যের বাঁধ বুঝি এবার ভাঙবার মুখে। উদ্ধারকারী দলের একেকসময় একেক ঘোষণায় তাঁরা কার্যত বিভ্রান্ত। উদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে চাপা ক্ষোভের আভাষ মিলল মানিকের প্রতিবেশীদের কথাতেও।
৪১ জন শ্রমিকের উদ্ধার কাজ শেষ পর্যায়ে এসে বারবার থমকে যাচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে তাঁদের সুড়ঙ্গ থেকে বের করে আনার ডেডলাইন ধার্য করা হলেও তার আগে ড্রিলিং মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। এই পরিস্হিতিতে ধ্বংসস্তুপ সরাতে শাবল, গাইতি ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য বিকল্প উপায় ভাবছেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু লক্ষ্যপূরণে আদৌ আর কতটা সময় লাগবে তা একেবারেই স্পষ্ট নয়। শনিবার বিকালে উত্তরকাশীতে অবস্হানরত মানিকের ভাইপো বিনয় তালুকদারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর কথায়, ‘যতটুকু বুঝছি, দু’দিনের আগে হয়তো কিছুই হবেনা।’ এই অন্তহীন অপেক্ষায় বিনয়ও যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তা তাঁর গলার আওয়াজেই স্পষ্ট।
স্বামীর উদ্ধারের উজ্বল সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন মানিকের স্ত্রী সোমা। ফোনে স্বামীর গলা শুনে, উদ্ধারকারীদের কথায় তিনি ভেবেছেন এই বুঝি সব আঁধার কেটে গেল। কিন্তু তা হয়নি। এরমধ্যেই শনিবার সকালে বাড়ির উঠোনে পড়ে গিয়ে পায়ে চোট পান তিনি। প্রতিবেশীরাই আইসপ্যাক, ব্যথার মলম নিয়ে তাঁর শুশ্রুষায় এগিয়ে আসেন। এদিন দুপুরে বলরামপুর স্বাস্হ্যকেন্দ্রের একটি দল এসে সোমার শারীরিক পরীক্ষা করেন। উদ্বেগ দূরে সরিয়ে তাঁকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার পরামর্শ দেন তাঁরা। মানিকের ছেলে মণি প্রথম থেকেই মা’কে ভরসা জুগিয়ে আসছেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হচ্ছেন তিনিও। এদিন মণি বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধলে উদ্ধার প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক খবর পাচ্ছি। কিন্তু এখনও আসল কাজ হল না। জানিনা আমাদের জন্য শেষ পর্যন্ত কী অপেক্ষা করছে।’ তবে বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার রাতেও তাঁর বাবা ফোনে ধৈর্য রাখার কথা বলেছেন।
ওই শ্রমিকের প্রতিবেশী অভিজিৎ রায় বলেন, ‘বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের এনেও এখনও উদ্ধারকাজ শেষ না হওয়া যথেষ্ট আশ্চর্যের। এ বিষয়ে আরও কার্যকরী পরিকল্পনা প্রয়োজন।’ ওই এলাকারই সঞ্জয় তরফদারের কথায়, ‘ওখানে উদ্ধারকাজ খুব সহজ নয়, তা জানি। কিন্তু দুর্ঘটনার পর ১৪ দিন অতিক্রান্ত। এরপর আরও সময় প্রয়োজন হলে তা আটকে থাকা ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।’ সিল্কিয়ারায় সুড়ঙ্গের উদ্ধারকাজ কী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে নাকি শেষ মুহূর্তে এসে হাল ছাড়বেন উদ্ধারকারীরা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে আসমুদ্র হিমাচল।