ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা: যদি আবার সেরকম দুর্যোগ হয়, তাহলে কী হবে! এখনও প্লাস্টিকের চালের নীচে বসে ইষ্টনাম জপ করছেন ফালাকাটা (Falakata) শহরের বহু বাসিন্দা। দু’বছর আগে শিলাবৃষ্টি (Hail) হয়েছিল। সেই ক্ষয়ক্ষতির রেশ এখনও কাটেনি। এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি বাসিন্দারা। হালের হওয়া ঝড়-বৃষ্টিতে তাই আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা।
২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল, রবিবার। দিনটা আজও মনে রয়েছে দিলীপ রায়ের মতো সেই এলাকার বাসিন্দাদের। সেই সন্ধ্যায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টি শুরু হয়েছিল ফালাকাটায়। মাত্র ১৫ মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়। শিলাবৃষ্টি শুরু হতেই বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডই ওইদিন সন্ধ্যার শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বলছে পুর কর্তৃপক্ষই। পুরসভার ৪ হাজার বাড়ির প্রায় ১৬ হাজার বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছিল পুরসভার ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। শিলাবৃষ্টিতে মূলত যাঁদের টিনের চাল দেওয়া ঘর ছিল, সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় সব টিনের ঘরের চাল ফুটো হয়ে গিয়েছিল। বড় বড় শিল টিন ফুটো করে বাসিন্দাদের মাথায়ও পড়ে। ওইদিন শহরের যাদবপল্লি, হাটখোলা, সারদানন্দপল্লি, মহাকালপাড়া, বাবুপাড়া প্রভৃতি এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়ির টিনের চাল ফুটো হয়ে গিয়েছিল। বাসিন্দারা এর পর সাহায্যের জন্য পুরসভায় গিয়েছিল। কিন্তু পুরসভা কোনও সুরাহাই করতে পারেনি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। শহরের বাসিন্দাদের সবাইকেই নানান দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছিল। দু’বছর আগে শিলাবৃষ্টির সময়। টিনের চাল ফুটো করে ঘরের মধ্যে শিল ঢুকে পড়ে শহরের বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সূত্রধরের। শিলের আঘাতে জখমও হয়েছিলেন। এর পর চাল দেওয়ার জন্য পুরসভার কাছে প্লাস্টিক চেয়েও পাননি।
ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার বিষয় নিয়ে অবশ্য এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করতে চাইছে না পুরসভা। নির্বাচনি বিধি কার্যকর থাকায় তাঁরা পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন।
যদিও তৃণমূলের দাবি তারা প্রয়োজনীয় সাহায্য করেছেন। তৃণমূলের ফালাকাটা টাউন ব্লক সভাপতি শুভব্রত দে বলেন, ‘ওই বছর সবে পুরসভা গঠন হয়েছিল। তার মধ্যেই বিপর্যয় হয়। পুরসভা তাদের মতো সাহায্য করেছিল। তবে আমরা দলীয়ভাবেও অনেক বাসিন্দাকেই নানাভাবে সাহায্য করেছিলাম।’
যাদের আয় কম তাঁদের অবস্থা তো আরও সঙ্গিন। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দিলীপ রায়ের কথায়, ‘আমরা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। শিলাবৃষ্টিতে ঘরের ফুটো হওয়া চালে প্লাস্টিক লাগিয়ে রাখি। এখনও মেরামত করতে পারিনি। এই অবস্থায় রবিবারের ঝড়ের তাণ্ডব দেখে আতঙ্কে আছি।’
বিজেপি কিন্তু কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। বিজেপির ফালাকাটা টাউন মণ্ডল সভাপতি চন্দ্রশেখর সিনহা বলেন, ‘দু’বছর আগে শিলাবৃষ্টিতে শহরের বেশিরভাগ বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মানুষ পুরসভায় গিয়েও সাহায্য পাননি। সামান্য প্লাস্টিকও দেবার ক্ষমতা নেই পুরসভার। সাধারণ মানুষের কাছে পুরসভার এই অক্ষমতার কথাই আমরা তুলে ধরছি।’
শিলাবৃষ্টির সেই ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি ফালাকাটা শহরের বাসিন্দারা। এই অবস্থায় এবার মারাত্মক ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। তাই রবিবারের মতো ফের ঝড়-বৃষ্টি হলে তাঁদের কী হবে তা ভেবেই এখন ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করছেন শহরের একাংশ বাসিন্দা।