শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: ‘নিষিদ্ধ রাসায়নিক নেই’ এই মর্মে ল্যাবরেটরির শংসাপত্র না দিলে ক্ষুদ্র চা চাষিদের কাছ থেকে কাঁচা পাতা না কেনার সিদ্ধান্ত নিল উত্তরবঙ্গের বটলিফ ফ্যাক্টরিগুলি। টি বোর্ড ও ইন্ডিয়ান ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (এফএসএসএআই) মানদণ্ড ও নির্দেশ মেনে সোমবার থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। ক্ষুদ্র চা চাষিদের দাবি, তাঁরা নিয়ম মেনেই সবকিছু করেন। বটলিফ ফ্যাক্টরিগুলির এই সিদ্ধান্ত অন্যায্য। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত তুলে না নেওয়া হলে উত্তরের সমস্ত ক্ষুদ্র বাগান বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারিও এদিন দেওয়া হয়েছে।
বটলিফ কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, কার পাতায় কী রাসায়নিক আছে, তা তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, কারণ পরীক্ষা করে দেখার ব্যবস্থা তাদের নেই। যদি ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি হয়, তবে বিনা দোষে এর দায় তারা নিতে যাবে কেন? সবমিলিয়ে রাসায়নিকের শংসাপত্র ইস্যুতে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে উত্তরবঙ্গের চা শিল্পে। এমন আবহে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে এদিন মিলিতভাবে চিঠি পাঠিয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতি, নর্থবেঙ্গল স্মল টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, আইটিপিএ-এর স্মল অ্যান্ড নিউ গার্ডেন ফোরাম, উত্তরবঙ্গ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চা চাষি সমিতি, উত্তর দিনাজপুর স্মল টি গ্রোয়ার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, চোপড়া স্মল টি প্ল্যান্টার্স সোসাইটি এবং উত্তরবঙ্গ ক্ষুদ্র চা চাষি ওয়েলফেয়ার সমিতি। বটলিফ ফ্যাক্টরিগুলির এমন সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে দাবি করে দ্রুত পদক্ষেপের দাবিতে টি বোর্ডের শিলিগুড়ির উপনির্দেশক সুবীর হাজরার কাছেও দরবার করে আসেন ওই সাতটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
কেন্দ্রীয় শিল্পবাণিজ্যমন্ত্রক বর্তমানে নিরাপদ চা তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য এফএসএসএআই-এর গাইডলাইন অনুসারে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এমন বেশ কিছু রাসায়নিকের তালিকা প্রকাশ করে সেগুলির ব্যবহার চা শিল্পে বন্ধ করে দিয়েছে। সম্প্রতি গোটা বিষয়টিকে নিয়ে রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা দপ্তর, টি বোর্ড, এফএসএসএআই ও চা মহলের মধ্যে একটি বৈঠকও হয়েছে। এপ্রিল থেকেই তৈরি চায়ের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার কাজে আরও গতি আনার কথাও চা শিল্প মহলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরই উত্তরবঙ্গের বটলিফ ফ্যাক্টরিগুলি ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে।
বটলিফের সংগঠন নর্থবেঙ্গল টি প্রোডিউসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় ধানুটি বলেন, ‘রাসায়নিকের বিষয়ে আমরা চাষিদের সচেতন করতে প্রস্তুত। তবে ওঁদের কাঁচা পাতা ফ্যাক্টরিতে ঢোকানোর আগে পরীক্ষা করে দেখার কোনও পরিকাঠামো আমাদের নেই। পরবর্তীতে যদি সমস্যা হয় তবে ফ্যাক্টরির লাইসেন্স রদ কিংবা চা বাজেয়াপ্তর মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এই সিদ্ধান্ত। কেন্দ্র, রাজ্য, টি বোর্ড সবাই মিলে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসুক।’
অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলছেন, ‘বটলিফ ফ্যাক্টরির এমন একতরফা ফরমান জারি স্বৈরতন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। চা আইনের কোথাও লেখা নেই ক্ষুদ্র চাষিদের কাঁচা পাতা বিক্রির সময় রাসায়নিকের শংসাপত্র দিতে হবে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে সমস্ত বাগান বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ নর্থবেঙ্গল স্মল টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ভরত জয়সওয়াল বলেন, ‘ক্ষুদ্র চা চাষে জড়িত কয়েক লক্ষ শ্রমিকের পেটে লাথি পড়ার জোগাড় হয়েছে। প্রশাসন বিষয়টি না দেখলে বড় আন্দোলন গড়ে উঠবে।’ আইটিপিএ’র স্মল অ্যান্ড নিউ গার্ডেন ফোরামের আহ্বায়ক জয়ন্ত বণিকের কথায়, ‘কাঁচা পাতা যদি বিক্রিই না হয়, তাহলে বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে বাগানগুলি মজুরি দেবে কোথা থেকে?’