সাগর বাগচি,শিলিগুড়ি: রাখে হরি মারে কে? এই প্রবাদটা ভীষণ রকমের সত্যি শিলিগুড়ির মহারাজা কলোনীর বাসিন্দা মহম্মদ মুক্তারের ক্ষেত্রে। তবে নিজের প্রাণ বাঁচলেও সিকিমের বিপর্যয়ে ১ ছেলেকে হারিয়েছেন মুক্তার। খোঁজ নেই তাঁর ২ মেয়ের।
তিস্তার বিপর্যয়পর্বে রীতিমতো ভাইরাল হয়েছিল একটি ছবি। চারিদিকে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের মধ্যে একটি গাছকে জাপটে রয়েছেন মুণ্ডিতমস্তক এক ব্যক্তি। শেষ পর্যন্ত কোনও ভাবে প্রকৃতির রোষ থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারলেও চোখের সামনে নিজের ৩ সন্তানকে তলিয়ে যেতে দেখেছেন শিলিগুড়ির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহারাজা কলোনির বাসিন্দা মহম্মদ মুক্তার।
কর্মসূত্রে নিজের ২ মেয়ে ১ ছেলেকে নিয়ে সিকিমের রংপোয় থাকতেন মুক্তার। কিছুদিন আগে পর্যন্ত স্ত্রী ছিলেন সঙ্গে। কিন্তু কয়েকদিন আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হওয়ায় স্ত্রী বিহারে বাপের বাড়িতে চলে যান। ৩ ছেলে মেয়েকে নিয়ে একাই থাকছিলেন মুক্তার। সিকিমের রংপোতে টিনের চালের একচিলতে বাড়িতে থাকতেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে সিকিমে যখন প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে তখন তিস্তার গর্জন শুনতে পেয়ে বিপদের আভাস পেয়েছিলেন মুক্তার। বাইরে এসে দেখেন তিস্তা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তড়িঘড়ি নিজের ছেলে মেয়েদের ঘুম থেকে জাগিয়ে বাইরে নিয়ে আসেন। প্রবল জলের স্রোতের হাত থেকে রক্ষা পেতে কোনও রকমে নিজের ছেলেকে তুলে দেন বাড়ির টিনের চালে। কিন্তু ভেসে যায় দুই মেয়ে। নিজেও প্রাণে বাঁচতে একটি গাঠে উঠে পড়েন। বাঁচানোর চেষ্টা করেন তখনও ছেলেটিকে। কিন্তু বিধি বাম। মুক্তারের চোখের সামনেই জলের স্রোতে তলিয়ে যায় ছেলেও। ভেসে যায় টিনের বাড়িটিও।
ওই প্রবল বৃষ্টিতে অন্তত ঘন্টা ছয়েক গাছটিকে জড়িয়ে থেকে যান মুক্তার। পরে সকাল হতে উদ্ধারকারী দল এসে তাঁকে কোনওরকমে উদ্ধার করে। বুধবারই দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁর ছেলের দেহ উদ্ধার হয়। শিলিগুড়ির মহারাজা কলোনি থেকে কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি রংপো গিয়ে ছেলেটির দেহ শিলিগুড়িতে নিয়ে এসে ময়নাতদন্তের পর শেষকৃত্য করেন। এদিন সেই রাতের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুক্তার। জানান, জীবনে কখনও ভুলতে পারবেন না ওই রাতের কথা।