ধূপগুড়ি: চলন্ত ট্রেনে ধূপগুড়ির এক দম্পতিকে অশ্লীল গালিগালাজ ও ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ট্রেন থেকে শিয়ালদহে নেমেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে ঘটনার প্রতিবাদ জানান ধূপগুড়ির ওই মহিলা। তিনি নিজেও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাইবার সেলের একজন সক্রিয় কর্মী বলে জানা গিয়েছে। দলেরই কর্মী-সমর্থকদের হাতে মহিলা কর্মী আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছে। রেলওয়ে বিভাগের রেল মদত অ্যাপে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলা।
জানা গিয়েছে, শনিবার ওই দম্পতি ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসে চেপেছিল। ট্রেনে ওঠার পর নিজেদের সংরক্ষিত আসন থাকলেও বসার জায়গা তাঁরা পাননি বলে অভিযোগ। তাঁদের বসার জায়গায় আগে থেকেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা বসেছিলেন। টিএমসিপি কর্মীদের উঠতে বললে তাঁরা মাত্র একটি আসন ছেড়ে দেন।
দম্পতির অভিযোগ, এরপরই তাঁদের উদ্দেশ্যে করে অশ্লীল গালিগালাজ ও মন্তব্য শুরু হয়। পাশাপাশি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিও করা হয়। মালদায় পৌঁছে জিআরপির কাছে অভিযোগ জানান ওই মহিলা। জিআরপি এসে টিএমসিপি কর্মীদের সরিয়ে মহিলা ও তাঁর স্বামীকে বসার জায়গা ফিরিয়ে দেয়। তবে এতেও কোনও লাভ হয়নি।
অভিযোগ, জিআরপি চলে যেতেই ফের টিএমসিপির কর্মীরা অত্যাচার শুরু করেন। মহিলা বারবার নিজেকে দলেরই একজন কর্মী বলে জানালেও কোনও লাভ হয়নি। তাঁর দাবি, প্রথমদিকে অশ্লীল মন্তব্য চললেও পরে ধর্ষণ এমনকি ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। শিয়ালদহে নেমেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে মহিলা ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাঁর সংযোজন, ওই ছেলেরা কোচবিহার ও দিনহাটার টিএমসিপির সদস্য। টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে কলকাতায় সভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। ঘটনাকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরেই।
জলপাইগুড়ি জেলার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি গৌরব ঘোষ বলেন, ‘দলের ওই মহিলা কর্মীর থেকে সবটা শুনেই মন্তব্য করা যাবে। তবে এমনটা হয়ে থাকলে অত্যন্ত নিন্দনীয়। দলের কেউ ঘটনায় যুক্ত থাকলে কোচবিহার জেলার নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা বলা হবে।’
একইরকম দাবি কোচবিহার জেলার টিএমসিপির সভাপতি অনির্বাণ সরকারের। তাঁর কথায়, ‘ট্রেনে অনেকেই ছিল। পুরো বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখেই বলা সম্ভব হবে।’
এতবড় ঘটনা ঘটলেও তা মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেই দাবি করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য নেতৃত্ব। যা আরও দুঃখজনক বলে দাবি বিরোধী শিবিরের। টিএমসিপি রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে।’
ঘটনায় মুখ খুলেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। তাঁর কথায়, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা হওয়া সত্ত্বেও একজন নারীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারছেন না। এটা অত্যন্ত লজ্জার।’